কে মহিয়সী নারী? (নওয়াব ফাইয-উন-নিসা বনাম বেগম রোকেয়া)



শুরুতেই বলে নিচ্ছি- আমার ১টা অভ্যাস আছে, কারও নাম আমার জানামতে অশুদ্ধ/ভুল হলে আমি তা শুদ্ধ করেই লিখি। তা সে অশুদ্ধ নামের যেই বিখ্যাত ব্যক্তিই হোক না কেন! কিন্তু তাদের ক্ষেত্রেই আমি এটা করি না, যারা আমার অতিশয় ঘৃণার পাত্র/পাত্রী- বেগম রোকেয়া তার অন্যতম। রোকেয়া নয়-রুকাইয়া, রাছূল(ছঃ) এর আদরের কন্যা ও উছমান(রাঃ)’র ২ জ্যোতির ১টি জ্যোতির নাম। তার কাজকর্মই গালি গালাজ খাওয়ার উপযুক্ত তাই আমি বেগাম রুকাইয়া না লিখে তার বিকৃত নাম বেগম রোকেয়া নামেই এই লেখায় তাকে অভিহিত কোরব।

১৯৭১ সালের বহু আগে থেকেই দুই দিনের বৈরাগীরা বাংলায় এই নষ্ঠ প্রথার চালু করেছিলো যে- ইসলামী ভাবধারার বিরুদ্ধে যেই লিখবে তাকেই মহান বানানো হবে। সে চুনোপুটি হলেও তাকে রাঘব-বোয়ালে রুপান্তরিত করা হবে। মূলত ব্রিটিশ যুগে বহু জমীন্‌দার ও নব্য অভিজাতের আর্বিভাব হলে তাঁদের মাথায় এই চিন্তায় বেশি কাজ করে যে- কিভাবে নিজেকে জাহির করা যায়? নিজেকে জাহির করার মাধ্যম হিসেবেই তারা শাসকগোষ্ঠী পদলেহন মূলক কাজ করতো- যাতে শাসকগোষ্ঠীর সুনজরেও পরে আর বিখ্যাতও বনে যায়। নারী শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে খ্যাত এই বে-গুণ রেকেয়াও ছিলো এমনই ১ মাতারী(বিঃদ্রঃ মাতারী কোন গালি নয়- বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় মাতারী অর্থ মহিলা)। বেগম রোকেয়া’র জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দের জমীন্‌দার যাহীর-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ আবু আলী হাইদার সাবের এর ঔরস্যে, তার মূল নাম রোকেয়া খাতুন; সাখাওয়াত হুসাইনের সাথে বিয়ের পর তার নামের সাথে সাখাওয়াত হুসাইন যুক্ত হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্থের পরে যেসব জমীনদারী(জমীদারী) ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে সাবের পরিবার জমীন্‌দারী তেমনই এক জমীন্‌দারী। ১টি পরগণাও নয় এই জমীন্‌দারী গড়ে উঠেছিলো কিছু তালূ’ক সমন্নয়ে, এদের পরিবারের জমীন্‌দারীর বয়স রোকেয়ার সময় ৮০ বছরও ছিলো না। নারী শিক্ষার অগ্রদূত নামে খ্যাত এই মহিলার জনহিতকর কাজ ছিলোঃ
১/ সাখাওয়াত ম্যামোরিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠা(১৯০৯ ঈঃ) ও
২/ আন্‌জুমান-ই-খাওয়াতীন-ই-ইসলাম নামক মুসলিম নারীদের ১টি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন(১৯১৬ ঈঃ)। এই নারী সংগঠন নিশ্চই জনহিতকর কার্যাবলি নয়, তাও তার জনহিতকর কার্যাবলির তালিকা বৃদ্ধির জন্যে দিলাম এটিও যোগ করে। তিনিও ব্রিটিশ যুগের নব্য-জমীন্‌দারদের মতো উর্দুভাষী ছিলেন, পরে বাংলা, আরবী, ও ইংলিশ শিখেন। পিপাসা, Sultana’s dream, মতিচুর, পদ্মরাগ, অবরোধবাসীনি তার রচিত গ্রন্থ। এই হচ্ছে রোকেয়া ও তার জনহিতকর কাজ ও সাহিত্যকর্ম। এবারে চলুন- ফাইয-উন-নিসার অবস্থা দেখে আসি?
ফাইয-উন-নিসা অর্থই ‘সফল/বিজয়ীনি নারী’, 
তিনি রোকেয়ার জন্মেরও ৪৬ বছর আগে ১৮৩৪ ঈসায়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার শরীরে মোগল রাজবংশের রক্ত প্রবাহিত ছিলো, একদা বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার গোটা লাকসাম থানাই ছিলো তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ব্রিটিশ শাসনের ফলে তাদের জায়গীর ছোট হতে হতে হুসাইনাবাদ পরগণায় সীমিত হয়ে পরে, তদুপরি গোটা ১টি পরগণাজুড়ে বিস্তৃত ছিলো চৌধুরীদের বিশাল জমীন্‌দারী। তার পিতা-মাতা ও স্বামী সবাই ছিলেন প্রাচীন জমীন্‌দার পরিবারের লোক। পুরাতন অভিজাত হওয়ায় তার মাতৃভাষা ছিলো ফার্সী ও ২য় বাংলা। এছাড়াও তিনি আরবী, উর্দু ও সংস্কৃতেও সমান পারদর্শী ছিলেন। রোকেয়া যেখানে বড় বড় কথা লিখে, মেয়েদের নিয়ে সংগঠন করে মাত্র ১টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলো সেখানে নাওয়াব ফাইয-উন-নিসার অবদান নিন্মরুপঃ
১/ফাইযুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়,
২/ শৈলরাণী বিদ্যালয়,
৩/ ফাইযুন্নেসা মহাবিদ্যালয়,
৪/ ফাইযুন্নেসা বিদ্যালয়,
৫/ নিজ বাড়ীতে ১টি মাসজিদ ও
৬/ মাদরাসা(বর্তমানে আমাদের মহান সরকার বাহাদূর একে ফাইযুন্নেসা সরকারী মহাবিদ্যালয়ে রুপান্তরিত করেছে),
৭/ বাদরুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয় ও ছাত্রীবাস,
৮/ লাকসাম দাতব্য চিকিৎসালয়,
৯/ ‘সামনীর পুল’ নামক ১টি লোহার সেতু,
১০/ নওয়াব ফাইযুন্নেসা হসপিটাল(১৮৯৩ ঈঃ),
১১/ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় এক তৃতীয়াংশ ব্যয়ভার বহন,
১২/ ১টি ইয়াতীমখান,
১৩/ ১টি মুসাফিরখানা,
১৪/ মাক্কাহ্‌ মুকার্‌রমায় হাজ্জ্ব করতে যেয়ে ১টি মুসাফিরখানা এবং এছাড়াও
১৫/ তার ১১টি জমীন্‌দারী কাচারীর প্রত্যেকটির পাশে প্রজাদের জন্য ১টি করে পুকুর, মাকতাব ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
শুধু তাই-ই নয় এই দানবীরাঙ্গনা তার সন্তানদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়ার পর তার বিপুল সম্পত্তি ধর্মীয় কাজের জন্য ওয়াক্বফ্‌ করে দেন। সমাজসেবা, শিক্ষা ও ধর্মীয় কাজে অবিষ্মরণীয় ত্যাগের জন্যে ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়া ফাইয-উন-নিসা চৌধুরানীকে ১৮৮৯ সালে ‘নওয়াব’ খেতাবে ভূষিত করেন, বিশ্বে উনিই ১ম নারী নওয়াব। এই মহিয়সী নারীর ৩টি গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায়, এগুলো হচ্ছে- ১/রুপজালাল, ২/সঙ্গীত লহরী ও ৩/ সঙ্গীতসার। এই মহিয়সী নারী ৩০ বছর নিজেই নিজের বিশাল জমীন্‌দারী শাসনের পর ১৯০৩ সালে ৭১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ্‌ উনার কবরকে সুবাসিত করুক। আর বে-গুন রোকেয়া ২০ বছর তার বিষাক্ত লেখনী পরিচালনা করার পর ১৯৩২ সালে ৫২ বছর বয়সে মারা যান। আশাকরি দুই নারীর কর্মকান্ডের আকাশ-পাতাল প্রভেদ দেখার পর সবার মনেই এই প্রশ্ন উঠেছে যে- তাঁহলে বে-গুন রোকেয়াকে কেন নারী শিক্ষার অগ্রদূত/মহিয়সী নারী বলা হয়? কারণ ১টাই- এই মহিলা ইসলাম ও কুরআনের বিরুদ্ধে বহু বিষাদগার করেছিলো তাই! যা ঐ যুগে এমনিই বিরল ছিলো- আর ১জন নারীর জন্যে তো বিশাল ব্যাপার। বিশ্বাস হচ্ছে না? তবে ১ কাজ করুন- নিজেই বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরের ‘ভাষা-সাহিত্য’ নামক ডুপ্লেক্স গ্যালারীরে ঢুকুন- দোতলায় বেগম রোকেয়ার নিজের হাতের লেখা দেখতে পাবেন- তাতে স্পষ্ট বাংলাতেই দেখতে পাবেন ইসলাম সম্পর্কে এই মাতারী কি মারাত্বক ধারণা পোষণ করতো! এই ডাইনীর চিন্তাধারা যে কতোটা নোংরা ও হীন, তার কদর্য ও নগ্নতম প্রমাণ তার Suntana’s Dream এর পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। আজ এই ডাইনীর জন্মদিন ছিলো গুগলও আজ এই ডাইনীর ছবি দেখাচ্ছে! 
আজ ‘রোকেয়া পদক’ বিতরণ করা হয়েছে। তাই না চাইতেও তার কদর্য কর্মকান্ডের কথা আমার মনেপড়ে গেলো। আমি স্পষ্টভাবেই বলছি- নারী শিক্ষার অগ্রদূত কাউকে যদি বলতেই চান তো “নওয়াব ফাইয-উন-নিসা চৌধুরানী”কে বলুন।

   

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক

যৌন সাধনা! Sex Warship !মধুসুন্দরী সাধনা! পারী(পরী) সাধনা! পঞ্চকন্যা সাধনা! ছিন্নমস্তা সাধনা! এবং আমাদের আজকের মূল আলোচ্য 'কর্ণ পিশাচীনি' সাধনার মূলে আসলে কি আছে? দেখুন এই সাধনার পেছনে আসলে কি আছে? কর্ণ পিশাচিনী সাধনা করার বিস্তারিত নিয়ম এই ১ম ইউটিউবে দেখতে পাবেন বিস্তারিত- যেখানে কিছুই বাদ রাখা হয়নি! বিঃদ্রঃ ভিডিওটি সম্পূর্ণভাবেই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও নারীরা দূরে থাকুন।

সুলতান আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্‌'র মেবাড় বিজয়