ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক
সুলতান
আলা-উদ-দুন্ইয়া-ওয়াদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জী
প্রারম্ভিকা
আলী গর্সাম্প্ যিনি ইতিহাসে “আলা-উদ-দ্বীন
খাল্জী” নামেই খ্যাত। যদিও উনার প্রকৃত নাম “#আলী_গরসাম্প্”
ও উপাধী “আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জী”। অনেকেই
উনার উপাধীকে খল্জী কেউ কেউ বা খিল্জী বলে থাকেন,
তা পুরোপুরিই ভুল। তারিখ-ই-ফিরুয শাহী’র মূল
ফার্সী বইয়ে আমি খ-এর নিচে যের্ নয়- বরং প্রত্যেকটিতেই যবর্ দেখেছি, সেহেতু
শুদ্ধ পদবী হচ্ছে “খাল্জী”
খিলজী নয়। তাবাকাত-ই-নাছিরীতে যেই খাল্জ
গোত্রের উল্লেখ আছে- সেই গোত্রের লোকেরাই খাল্জী পদবীধারণ করতেন। আমি ভারতের
ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক “আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্” সম্পর্কিত
কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা কোরব ইনশা আল্লাহ্। শিরোনামটাই
অনেকের কাছে আপত্তিকর ও অনেকের মনে বিভিন্ন প্রশ্নও এনে দিয়েছে জানি। সেগুলো
হচ্ছে- অমুসলিমরা বোলবেন আমি কিসের ভিত্তিতে উনাকে অশোক ও ২য় চন্দ্রগুপ্তের উপরে
স্থান দিলাম? মুসলিমরা বোলবে- আমি কিভাবে আওরঙ্গযেবের
উপরে উনাকে স্থান দিলাম? এর উত্তর বিস্তারিত প্রতিটি পর্বেই পাবেন
ইনশা আল্লাহ্। আপাতত শুধু এটুক-ই বলছি- “আওরঙ্গযেব ব্যক্তি জীবণে ধার্মিক ছিলেন ও
নিঃসন্দেহে উনি সুলতান আলা-উদ-দ্বীনের চাইতে ১জন মুসলিম হিসাবে শ্রেষ্ঠ ছিলেন।
কিন্তু ধর্মীয় মাপ-কাঠিতেই কেবল শাসকের শ্রেষ্ঠত্ব নিরুপন হয় না। সেটা হয়- শাসন
ক্ষমতা, প্রতিপত্তি,
ন্যায়-বিচার, সামরিক
সাফল্য ও বিভিন্ন অবদানের ভিত্তিতে। আর ধর্ম বিচার করলে সেরা ধার্মিক শাসকের তকমা
কেবলমাত্র সুলতান নাছির-উদ-দ্বীন মাহ্মূদ শাহ্(রহঃ)-ই পেতে পারেন। কারণ উনি
খুলাফাতুল রাশিদীনের আদর্শ অনুসরণ করতেন নিজের ব্যক্তি জীবণে এবং তার জীবণের
প্রতিটি কাজই ছিলো সকল প্রকারের বিতর্কেরও উর্ধ্বে”। যাইহোক কয়েকটি জিনিসের ভিত্তিতে সেরা
শাসক নিরুপিত করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছেঃ (১)
উপ-মহাদেশের প্রতি অবদান, (২) শাসক হিসাবে শাসন কৃতিত্ব, (৩) জনগণের
অবস্থা, (৪) সামরিক শক্তি, (৫) সামরিক
সাফল্য, (৬) বিজেতা হিসাবে অবস্থা, (৭)
প্রতিপত্তি ও জনগণ এবং শত্রুর উপর শাসকের প্রভাব,
(৮) ঐশ্বর্য্য এবং (৯) রাজ্যের
স্থায়ীত্বের প্রতি অবদান। এই ৮টি বিষয় আলোচনা করে আমার দাবী প্রমাণ
করে দেবো ইনশা আল্লাহ্। অতঃপর রাণী পদ্মীনি ও এই সম্পর্কিত বিভিন্ন দাবীর সাথে
সাথে প্রকৃত ঘটনাও তুলে ধরা হবে ইনশা আল্লাহ্। তবে সবকিছুর আগে আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী’র পূর্ব
জীবণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করছিঃ
জাগরেস খানের ২য় পুত্র শিহাব-উদ-দ্বীন
খাল্জী’র পুত্র আলী গর্সাম্প্ ঈসায়ী ১২৬৬ সালে
জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই শিহাব-উদ-দ্বীনের মৃত্যু হলে শিহাব-উদ-দ্বীনের ৩য় ভাই
ফিরুয খাল্জী আলীর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে তিনি খুব ১টা সমাদরের
সাথে চাচার কাছে প্রতিপালিত হননি, তার প্রমাণ তিনি সম্পূর্ণ নিরক্ষর ছিলেন।
উনার নিজের ভাষ্যমতে উনি মাসনূন দু’আসমূহ,
সূরা-ফাতিহা ও সূরা-ইখলাছ বাদে আর কোন
সূরাও জানতেন না। তবে বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন ১জন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। অশ্ব ও অসি
চালনায় তিনি তার আমলে অদ্বিতীয় ছিলেন। তাই চাচা ফিরুয খাল্জী নিজের মেয়ের সাথে
আলী গরসাম্পের বিয়ে দেন। এই ফিরুয খাল্জী-ই ১২৯০ সালে খাল্জী বংশের রাজত্ব
প্রতিষ্ঠা করেন ও স্বয়ং “জালাল-উদ-দ্বীন ফিরুয শাহ্ খাল্জী” উপাধীধারণ
করেন। সামরিক সুখ্যাতির জন্য তিনি ১২৯০ সালে আমীর-ই-তুযুক পদে চাচা কর্তৃক নিযুক্ত
হন। ১২৯১ সালে তিনি সুলতান বাল্বানের ভ্রাতুষ্পুত্র মালিক সাজ্জু’র বিদ্রোহ
কঠোর হাতে দমন করে কারাহ্ অধিকার করায়- সুলতান জালাল-উদ-দ্বীন আলী গরসাম্পকে “আলা-উদ-দ্বীন” উপাধী দান
করে কারাহ্’র শাসনভার পুরষ্কারসরুপ তার উপরেই অর্পণ
করেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে ১টি বিরাট প্রদেশের শাসনভার প্রাপ্ত হওয়ার পরই শুরু হয়-
উনার শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠার জীবণি। সূত্রঃ তারিখ-ই-আলাঈ
উপ-মহাদেশের প্রতি অবদান
১ম পর্বেই
বলেছি ৯টি ধারায় উপ-মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নির্ণয় কোরব, এই ৯টি ধারার
মাঝেই মুহাম্মাদ শাহ্কে নিয়ে যাবতীয় বিভ্রান্তিও দূরীভুত হবে ইনশা আল্লাহ্।
৯টি ধারার প্রথমেই আসছে- “উপ-মহাদেশের প্রতি অবদানের কথা”। ভারত, ভারতবর্ষ ও ইন্ডিয়া
দ্বারা কিন্তু উপ-মহাদেশই বোঝায়, কোন একক দেশ নয়। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই
সাম্প্রদায়িক হিন্দুরা বহু রাষ্ট্রের সমষ্টি এই উপ-মহাদেশকে এক দেশ বানানোর ও
দেখানোর জন্য এতোই প্রচারণা চালায় যে- আমি ভারত বললে শুরুতেই ১টা ঝামেলার
সৃষ্টি হতো। যেহেতু উপ-মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নিরুপণ করতে বসেছি- সেহেতু এই
অঞ্চলের প্রতি যার অবদান সবচাইতে বেশি- সর্বশ্রেষ্ঠ শাসকের শিরোপা তারই
প্রাপ্য। প্রথমেই উপ-মহাদেশের অবস্থান সম্পর্কে একটু ঝালিয়ে নিতে চাই, উপ-মহাদেশ বলতে
অধিকাংশই বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বর্তমান ভূ-খন্ডকে বুঝে
থাকেন। কেউ বা আবার এর সাথে নেপাল,
ভূটান ও শ্রীলঙ্কাকেও যুক্ত করে থাকেন! প্রকৃতপক্ষে
বিশ্বের আর ১০টা ভূখন্ডের মতো ভারতের সীমাও এর প্রাকৃতিক সীমাদ্বারা নির্ধারিত
হয়েছে। #১ম_মানচিত্রটি
দেখুন,
এতে প্রকৃত
উপ-মহাদেশকে বিবর্ণ সাদা রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং আধুনিক পাকিস্তান ও ভারতের
উপ-মহাদেশের বর্হিভুত অঞ্চলগুলিকে তাদের পতাকার রঙে চিহ্নিত করা চিহ্নিত করা হয়েছে।
উপ-মহাদেশের মূল অঞ্চলগুলো যে যে রাষ্ট্রগুলোর মাঝে পরেছে- তাদেরই বিভিন্ন রঙে
চিহ্নিত করা হয়েছে। কেবলমাত্র চীন উপ-মহাদেশের অর্ন্তগত না হলেও বর্তমানে ভারতের
কিছু কিছু অঞ্চল দখল করে রেখেছে বিধায় চীনকেও স্বতন্ত্র রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই
সীমাটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক সীমা, পূর্বে লুসাই ও পাতকাই পর্বতমালা ও ‘মূল’ বরাক নদী।
পশ্চিমে লবণগিরি, সিন্ধুনদ ও খিরথর পর্বতমালা; উত্তরে শিওয়ালিক ও
মহাভারত পর্বতমালা এবং দক্ষিণে সাগর- এটাই হলো মূল ভারতের সীমা। #২য়_মানচিত্রটি
দেখলে আরও
স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন, আমি এখানে ভারতের প্রাকৃতিক মানচিত্রের উপরে লাল
কালিতে সীমা চিহ্নিত করে দিয়েছি। যাইহোক এবারে প্রসঙ্গে ফিরছি, ভারত নামক এই
উপ-মহাদেশকে গোড়া থেকেই মুসলিমরা দু’টি অঞ্চলে ও নামে পরিচিত ছিলো। সিন্ধু নদী ও এর
শাখা-প্রশাখা বিধৈত স্থানটি সিন্দ্ ও বাকি অঞ্চল হিন্দ্ নামে পরিচিত ছিলো।
পারস্যের হাখামানেশী(একামেনিড), কায়ানী(পার্থিয়া) ও সাসানী সাম্রাজ্য সিন্দ্কে
বহু বছর শাসন করেছে- তারাই এই “সিন্দ্”
নামটি দিয়েছে। আর হিন্দ্ নামটি আরবদের দেয়া, কারণ
সুপ্রাচীন কাল থেকেই আরবরা মূলত মশলা ও নানান বাহারী দ্রব্য ক্রয়ের জন্য #৩য়_মানচিত্রের
হিন্দ্ নামক
প্রদর্শিত ভূখন্ডের বিভিন্ন বন্দরে বাণিজ্য করতো,
তাদের যাবতীয়
চাহিদা এই ভারত-ই পূরণ করতো বিধায় তারা এর নাম দিয়েছিলো “হিন্দ্” বা প্রিয়(চাচনামা
দ্রঃ)। হিন্দের অধিবাসীরাই হিন্দু- এটি অঞ্চল ভিত্তিক নাম- ধর্মভিত্তিক
নয়। অনেকে যে ভেবে থাকেন- হিন্দু বেশি তাই নাম- হিন্দুস্তান এটা ১টা ভিত্তিহিন
কথা। হিন্দ্ ও সিন্দ্ কিন্তু আদৌ দেশবাচক নাম নয়- বরং অঞ্চলভিত্তিক নাম।
হিন্দ্, সিন্দ্ আর হিন্দুস্তান শব্দত্রয়ের অর্থ ভিন্ন
ভিন্ন। হিন্দ্ ও সিন্্নদ্বারা পৃথক পৃথক অঞ্চল বোঝায়, কিন্তু হিন্দুস্তান
দ্বারা ১টি রাজ্যের নাম বোঝায়। যার গড় সীমা #৪র্থ_মানচিত্রে
প্রদর্শিত ভূখন্ড
বোঝালেও সোজা ভাষায় হিন্দুস্তান বলতে বোঝাতো রাজধানী দিল্লী কর্তৃক শাসিত অঞ্চলকে।
হিন্দুস্তান আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর পূর্বে কোনদিনই উপ-মহাদেশের প্রতিশব্দ
ছিলো না।#দাক্ষিণাত্যকে
চিরকালই ভারতের বাহিরে/উত্তর ভারতের আয়ত্তের
বাহিরের ভূখন্ড হিসাবে ধরা হতো। উনার পূর্বে এই দাক্ষিণাত্যের শেষ সীমা “কন্যাকুমারিকা” পর্যন্ত কেউই তার
আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। গৌড়ের সম্রাট দেবপাল পেরেছিলেন, তবে তার কোন
স্থায়ীত্ব ছিলো না। দেবপালের মৃত্যুর পরই তার বিরাট সাম্রাজ্যে ভাঙন ধরে। গুপ্ত/মৌর্য্য
কারও-ই এই দাক্ষিণাত্যের প্রতি কোন দাবী ছিলো না,
কারণ এদের কেউই
কন্যাকুমারীকায় পা-ই দিতে পারেনি। ভারতের ২,৬০০ বছরের
রাজনৈতিক ইতিহাসে আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী পর্যন্ত দীর্ঘ ১৯১১ বছর কেউই যা করতে
পারেননি- আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী তাই করে ছেড়ে ছিলেন- কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত গোটা
দাক্ষিণাত্য পদানত করে। পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিকেরা আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী’র নীতি না
বুঝে(ইচ্ছেকৃত ভাবে না বোঝার ভান করে) উইকিপেডিয়াসহ তাদের প্রদর্শিত বিভিন্ন মানচিত্রে
দাক্ষিণাত্যকে আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর সাম্রাজ্যের বর্হিভুত দেখায়। অথচ সমসাময়িক
তারিখ-ই-আলাঈ ও তারিখ-ই-ফিরুয শাহী মতে- সুলতান দাক্ষিণাত্যের রাজাদের তার
বংশানুক্রমিক দাসে পরিণত করেছিলেন। তিনি তাদের রাজ্য থেকে উচ্ছেদ করেননি, তবে তাদেরকেই
সুলতানের সবথেকে অনুগত কর্মচারীতে পরিণত করেছিলেন! প্রতি বছর সুলতানী বাহিনীর
সাথে সুলতানের উপস্থিতির নিদর্শনসরুপ রাজকীয় লালছত্রকে সামনে রেখে খাল্জী বাহিনী
দাক্ষিণাত্যের রাজাদের রাজধানীতে আসতো,
আর প্রত্যেক রাজা সেই লালছত্রকে অভিবাদন জানিয়ে
অনুগত ভৃত্যের মতো নিজ থেকেই সুলতানের নির্ধারিত খাজনা ও জিযিয়া দিয়ে দিতেন। ১টা
বান্দারও সাহস ছিলো না- লালছত্র এলে টু-শব্দ করার বা সুলতানের বিভিন্ন
আদেশ নিয়ে দূতেরা এলে তা বাস্তবায়নে দেরী করার(তারিখ-ই-আলাঈ)। আলা-উদ-দ্বীন
খা্জীর সময় থেকেই হিন্দ্ ও সিন্দ্ হিন্দুস্তানের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে
যায়, একারণেই উনার পরে আর হিন্দ-সিন্দের কোন উল্লেখ
পাওয়া যায় না। যেই দাক্ষিণাত্যকে কেউই উত্তর ভারতের সাথে জুড়তে পারেনি- তা
আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী করেন। আর এটা এমন ভাবেই যে- দাক্ষিণাত্য দীর্ঘদিনের জন্য
হিন্দুস্তানের প্রদেশে পরিণত হয়ে এমন অবস্থা হয় যে- সবাই ভুলেই যায় দাক্ষিণাত্য
ও হিন্দুস্তান আলাদা। আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর এই বিজয় এতোই দৃঢ় হয় যে- তার
ইন্তেকালের ২৭৯ বছর পর মোগল বাদশাহ্ আকবার আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী’র সেই দাবীর
ভিত্তিতেই দাক্ষিণাত্য আক্রমণ করেন। এভাবেই আকবারের মাধ্যমে মোগল বাদশাহ্রা(আকবার, জাহাঙ্গীর, শাহ্ জাহান ও
আওরঙ্গযেব) দাক্ষিণাত্যের বুকে আবার পা রাখে। যেসব ভারতীয়রা আজ আলা-উদ-দ্বীন
খাল্জীকে ধুঁয়ে দিচ্ছে- তাদের বলছি “এত বড়াই করার
কিচ্ছু নেই, আপনাদের সাঁধের ভারত আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর-ই দান”।
শাসক হিসাবে শাসন কৃতিত্ব
আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্কে আমি
উপ-মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসকরুপে আখ্যায়িত করছি। কিন্তু মুখের
কথায় তো আর চিড়ে ভেজে না তাই এটা প্রমাণ করে দেওয়ার দায়িত্বও আমার। মোট ৯টি ধারায়
বিশ্লেষণ করলেই এটি বেড়িয়ে আসবে, এখন পর্যন্ত মাত্র ১ম
ধারাটি প্রমাণ করেছি যে- “ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নির্ণয়ে বসেছি, তাই প্রথমেই
কথা আসবে ভারতের প্রতি অবদানের ভিত্তিতে। সুলতান
আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী কর্তৃক দাক্ষিণাত্য জয় না করলে হিন্দুস্তানের অস্থিত্বই
থাকে না- ভারত তো দূরের কথা। এই ১ম ভারতের কোন শাসক কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত
গোটা দাক্ষিণাত্য অধিকার করে- তা হিন্দুস্তান তথা উত্তর ভারত/আর্য্যাবর্তের
অধীনে আনেন। এরই মাধ্যমে শুরু হয়- হিন্দুস্তানের ইতিহাস”। এবারে ২য়
ধারায় আসছি- ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নির্ণয়ের জন্যে ভারতের পরেই আসবে
শাসকের কথা। জনগণের উপর তার শাসন কেমন ছিলো?
শুধু তার শাসন
একাধারে বলে গেলেই হবে না, অন্যান্য সমস্থ শাসকের কথাও মাথায় থাকতে
হবে। এবারে সেই আলোচনাই শুরু করছি- সমস্থ
প্রজাদের বাধ্য রাখা ১টি দূরহ কাজ,
তাও আবার এমন
এক দেশে- যেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অ-মুসলিম,
কিন্তু শাসক শ্রেণী মুসলিম! শাসনের আওতায় কেবলমাত্র
সাধারণ প্রজারাই পরেন না, আমীর-উমরাহ্ ও প্রাদেশিক শাসনকর্তারাও
এদের অর্ন্তভুক্ত। এদিক দিয়ে দেখলে সম্রাট অশোক
সফল, কারণ অশোকের বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের পর তার
অহিংস নীতির সুযোগে আটবিকরা বিদ্রোহের পায়তারা
করছিলো, কিন্তু অশোক আটবিকদের সাবধান করে দেওয়ায়
তারা এর থেকে বিরত থাকে। গুপ্ত সম্রাট ২য়
চন্দ্রগুপ্ত উরফে বিক্রমাদিত্য ব্যর্থ,
কারণ তার সময়েই সমতট স্বাধীন হয়ে যায়। আর আওরঙ্গযেবের
ব্যাপারে বলতে হয় উনার সিংহাসন আরোহণ থেকে শেষ পর্যন্ত একাধিক বিদ্রোহের
সম্মুখিন হতে হয়- হিন্দু প্রজারা উনার সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলো এবং মারাঠাদের
তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। আর আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর দিকে তাকালে দেখা যায়-
তার শাসনামলের প্রথম দিকে বিদ্রোহ হয়েছিলো। তিনিও হিন্দুস্তানের অন্যান্য
সুলতানদের{কুতুব-উদ-দ্বীন আইবেক, ইলতুতমিশ ও
নাছির-উদ-দ্বীন মাহ্মূদ শাহ্(রহঃ) বাদে}
মতো মদ্যপান
করতেন। এবং মাতাল অবস্থায় তিনি প্রায়ই দিগ্বিজয়ের হুংকার ও তার প্রধান ৪ আমাত্য
নিয়ে নতুন ১টি ধর্ম প্রচারের কথা বলতেন। ঐতিহাসিক জিয়া-উদ-দ্বীন বারানী’র চাচা
আলা-উল-মূল্ক এ ব্যাপারে(ধর্ম প্রচার) সুলতানকে বোঝালে সুলতান তার ভুল বুঝতে
পারেন ও সবকিছুর মূলে মদকেই দায়ী করেন। তিনি চিন্তা-ভাবনা করে দেখেন বিদ্রোহ ও
তার নিজের নতুন ধর্ম প্রচারের মতো বিকৃত চিন্তা-ভাবনার কারণ ‘মদ্যপান’, সুলতানের
নিজের ভাষায় “আমি চিন্তা করে দেখলাম- মদ মানুষকে
বে-পরওয়া করে দেয় ও মাতাল অবস্থায় বে-ফাস কথা মুখ
থেকে বেড় হয়”(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী)। এই চিন্তার পরই তিনি মদ্যপান
নিষিদ্ধ করেন, সবার আগে নিজের মদের পাত্র ও সোরাইগুলো
ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলে রাস্তায় নিক্ষেপ
করেন। বারানীর ভাষায় “বাদাউনী দরওয়াজার সামনে মদের স্রোত নদীর
মতো প্রবাহিত হয়”। মদ ছাড়ার
পর সুলতান বদলে যান শাইখ নিজাম-উদ-দ্বীন আউলিয়া(রহঃ) এর ভক্তে পরিণত হন। শুধু
যে মদ-ই নিষিদ্ধ করেন তাই নয়- এই ব্যাপারে কঠোর শাস্তির প্রবর্তন করেন। সেটা
হচ্ছে- রাজধানীর বাদাঊনীর দরওয়াজার সামনে- কতগুলো কুপ খনন করে মদ উৎপাদক, প্রস্তুতকারণ, ব্যবসায়ী, মদখোর ও
সংশ্লিষ্টদের তাতে লাথি-গুতা দিয়ে ফেলে দেয়া হতো। নিঃসন্দেহে আওরঙ্গযেব উনার থেকে
শতগুণ বেশি ধার্মিক ছিলেন, নাছির-উদ-দ্বীন মাহ্মূদ শাহ্(রহঃ) সবার
সেরা ধার্মিক সুলতান ছিলেন, সিকান্দার
লোদী ও শেরশাহ্ও ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু কারও পক্ষেই মদ্যপান বন্ধ করা
সম্ভব হয়নি- “১মাত্র আলা-উদ-দ্বীন
খাল্জীর শাসনকাল ছাড়া”। উনার পূর্বে বা পরের- আজ পর্যন্ত কারও
শাসন প্রজাদের ঘড় পর্যন্ত এভাবে বিস্তার লাভ
করেনি যেমন ভাবে আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর সময় হয়েছিলো। শুধু তাই-ই নয়- ব্যভিচার ও
সমকামীতার জন্য প্রাণদন্ডের কঠিন নিয়মের প্রবর্তন করেন। আশ্চর্য্যের ব্যাপার হচ্ছে
তারিখ-ই-আলাঈতে সমকামীতার ব্যাপারে সুলতানের ঘৃণার একাদিক দৃষ্টান্ত উঠে এলেও
কিছু ইউরোপীয় ও হিন্দু ‘ঐতিহাসিক’
কেবলমাত্র এইজন্য আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর
উপরে ব্যভিচারের জঘন্য অপবাদ দেয় যে –উনি মালিক
কাফুরকে অধিক বিশ্বাস করতেন। ইতিহাস গবেষকদের কাছে বিষয়টি নতুন কিছু নয়, এরা একই
কারণে সুলতান মাহ্মূদের উপরেও সমকামীতার অপবাদ দেয়। যেহেতু এরা
পাশ্চাত্যধারার লেখক ও পাশ্চাত্যের লেখকেরা গ্রীক ও
রোমান সভ্যতার সাথে পরিচিত- যাদের(রোমান ও গ্রীক) কাছে সমকামীতা ছিলো ডাল-ভাতের
মতো ব্যাপার। আর সমকামীতার ব্যাপারে চুড়ান্ত ও জলন্ত প্রমাণ হচ্ছে খোদ নিজাম-উদ-দ্বীন
আউলিয়া(রহঃ) উনাকে(আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী) খুবই শ্রদ্ধা ও ভক্তি করতেন, ১জন সমকামী হলে
শাইখ ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই করতে পারতেন না। শাইখের আত্নজীব ণিতে এর ভুরি ভুরি
প্রমাণ আছে(সুলতানের প্রতি তার ভক্তির)। এসব ছাড়াও সুলতান আইন করেছিলেন-
পরকীয়ায় লিপ্ত নারীদের হত্যা করা হবে ও পুরুষদের অন্ডকোষ কেটে নেওয়া হবে। এসব
কঠিন নিয়ম-কানুন বিশেষত সাথে সাথে তা প্রয়োগের ফলে সুলতানের প্রজারা(মুসলিম-বিধর্মী)
নির্বিশেষে ব্যভিচার, সমকামীতা ও পরকীয়ার মতো ব্যাপারগুলোকে
মদের মতোই ভুলে যায়(তারিখ-ই-আলাঈ ও
তারিখ-ই-ফিরুয শাহী)। সুলতানের এত অধিক সংখ্যক গুপ্তচর
ছিলো যে- সাধারণ প্রজারাও এসব কুকর্ম করা দূরে থাক- কোন অপ্রয়োজনীয় কথাও বলতো না।
বারানী সুলতানের মুসলিম প্রজাদের ব্যাপারে বলেন- “ফরয,
সুন্নাহ্ ছাড়ার প্রশ্নই উঠতো না, মানুষ তখন
আলোচনা করতো আওয়াবীন ও চাশ্তের নামায এবং নফল ইবাদত নিয়ে”। আর
অ-মুসলিমদের ব্যাপারে বলতে হয়- সুলতানের নিজের ভাষায় “তাদের হাতে এমন
কোন অর্থ-সম্পদ আমি রাখিনি যে- তারা কখনও মাথায় উঠতে পারে। তারা মুসলিমদের
বাড়ীতে কাজ করে খায় ও ব্রাক্ষ্ণণেরা ভিক্ষা দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে। আমি
এদের এমন অবস্থা করেছি যাতে- আমার হুকুম মাত্রই এরা ইঁদুরে গর্তে ঢুকতে বাধ্য হয়”(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী)।
আসলেই তাই-ই ছিলো, আর এসব ভারতের ইতিহাসে ১জন বাদে আর কেউই
করতে পারেননি,
আর তিনি
হচ্ছেন- “আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী”। সাধারণ
প্রজারা দূরে থাক- বহু হিন্দু রাজা এমনকি অনেক সাহসী আলেমরাও তার সামনে
কাঁপতেন(মাওলানা মুগীস দ্রঃ)। #জম্মু_থেকে_কন্যাকুমারীকা
পর্যন্ত ১৭১২ মাইলের মধ্যে এমন কোন বাপের
ব্যাটা ছিলো না যে- আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর নামে টু-শব্দও করতে
পারে। আর এমনটা শুধু তার আমলেই ঘটেছিলো!
জনগণের অবস্থা
৯টি ধারায়
উপ-মহাদেশ সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নির্ণয় করতে বসেছি,
৯টি ধারার মাঝে ১/ভারতের প্রতি অবদান ও
২/শাসক হিসাবে শাসন কৃতিত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি,
আজ জনগণের অবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা
হবে। সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নিরুপনের জন্য প্রথমত- সংশ্লিষ্ট ভূ-খন্ডের প্রতি অবদান, দ্বিতীয়ত-
শাসন এবং তৃতীয়ত- জনগণের অবস্থার কথাই আসে। জনগণ তা সে যেই আমলের যেই ধর্মেরই হোক
না কেন- তাদের ভালো থাকা মূলত- জীবণধারণের জন্য আবশ্যক দ্রব্যমূল্যের উপর নির্ভর
করে। হিন্দুস্তান সালতানাতের চিরশত্রু মোঙ্গলদের দমন ও উপ-মহাদেশের সমস্ত অ-মুসলিম
রাজ্যগুলো দখলের জন্য সুলতান আলা-উদ-দ্বীনের বিপুল পরিমাণে সৈন্যের দরকার ছিলো। আর
বিপুল পরিমাণ সৈন্যের ব্যয়ও বিপুল,
আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর পূর্বে
হিন্দুস্তানের কোন সুলতানেরই স্থায়ী বেতনভোগী সৈন্য ছিলো না। সবাইকেই পারিশ্রমিক
হিসাবে জমী দেয়া হতো, জমীর আয় দ্বারাই তারা দিন গুজরান করতো। আর
অস্থায়ী সৈন্যরা পেতো গানীমাহ্। আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী-ই ভারতের ১ম কোন শাসক যিনি
স্থায়ী বেতনভুক্ত সেনাবাহিনী গড়ে তুলেন। বেতন দিয়ে বিশাল সৈন্যবাহিনী পুষতে গেলে
বছর বছর বেতনও বাড়াতে হবে(তখন বেতন ছিলো বাৎসরিক) ,
সেটা না করেও কোন উপায় নেই, কারণ
দ্রব্যমূল্য দিন দিন বৃদ্ধিই পায় কমে না। এই অসুবিধা নিরসনের লক্ষ্যে আলা-উদ-দ্বীন
খাল্জী ১ যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়- যা ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ’ ব্যবস্থা
নামে বিশ্ববিখ্যাত। সুই থেকে মাথার টুপি,
সর্ব প্রকারের সমস্থ জিনিসের মূল্য সুলতান
নিজেই নির্ধারণ করে দেন! এমন কি কৃষক/উৎপাদক কত শতাংশ লাভে মহাজনের কাছে বিক্রি
করবে, মহাজন আবার কত শতাংশ লাভে দোকানীর কাছে
বিক্রি করে দেবে এবং দোকানী ঐ বস্তু কত শতাংশ লাভে খরিদদারের কাছে বিক্রি করবে-
সুলতান নিজেই তা ঠিক করে দেন। মোদ্দা কথা গ্রাহণ মূল্য কখনই সুলতান কর্তৃক
নির্ধারিত মূল্যের ১ পয়সাও বেশি হতে পারতো না। ১ম ১ম যে এর কোন হের-ফের হয়নি- তা
নয়, বরং দোকানীরা সুযোগ পেলেই তাদের অভ্যাস
অনুযায়ী অনভিজ্ঞ ও অল্প-বয়স্ক ক্রেতাদের ঠকিয়ে দিতো। সুলতান এই ব্যাপারে খুবই উঠে
পড়ে লেগে নিন্মক্তো উপায়ে এসব বন্ধ করলেন। শিকারী পাখী প্রতিপালনের জন্য যেসব বালক
সুলতানের অধীনে চাকুরী করতো তাদের প্রায়ই বিভিন্ন জিনিস কিনে আনার জন্য পাঠানো
হতো। সুলতান নিজেই এদের পাঠাতেন ও এরা বিভিন্ন জিনিস কিনে আনার পর তা মেপে দেখা
হতো ও মান নির্ণয় করা হতো। দেখা গেলো প্রত্যেক জিনিসেরই ওজনে কিছু না কিছু কম দেয়া
আছে। যেসব দোকান থেকে এসব কেনা হতো,
তাদের দরবারে ত্বলব করা হতো। এই ত্বলব
মাত্রই দোকানীরা ভয়ে কাঁপতো, দরবারে আসার পর আবার সামনে মাপ দিয়ে ওজনে
কারচুপি প্রমাণের পর সুলতান হুকুম দিতেন- “ওজনে যেই পরিমাণ কম দিয়েছে, তার
দ্বিগুণ পরিমাণ গোস্ত এদের শরীর থেকে কেটে নেও”। কয়েকবার এমনটা করার পর দোকানীরা ভুলেও
ওজনে কম দিতো না, অনেক সময় সাবধানতার কারণে বরং বেশিই দিয়ে
ফেলতো! এখানেই শেষ নয়- মহাজনের আড়ৎ থেকে,
দোকান পর্যন্ত প্রতিটা স্তরে নজরদারীর
জন্য সুলতান কর্মচারী নিয়োগ করতেন। এছাড়াও প্রতিটি বাজারে কড়া-মেজাজের সৎ বাজার
সরদার নিয়োগ করা হতো। যাদের কাজ ছিলো সুলতান কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে দ্রব্য
বিক্রি করা ও এর হেরফের হলে সৈন্যদের ত্বলব করে শাস্তি দেয়া। বারানী বলেন “বাজারের
মতো তুচ্ছ ব্যাপারে স্বয়ং সুলতানের উঠেপরে লাগা দেখে সবাই-ই অবাক হয়ে গিয়েছিলো। যে
পর্যন্ত না সুলতানের ইচ্ছামতো সবকিছু পথে আসে-ততোদিন তিনি সবকিছু ছেড়ে এই নিয়েই
খুবই ব্যস্ত থাকতেন”! বারানী আরও বলেন তিনি সেইসব বৃদ্ধ লোকদের
কাছ থেকে ও তার নিজের চাচা সুলতানের কোত্ওয়ালের কাছ থেকে শুনেছেন “অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি,খরা এসব
সময়েও দ্রব্যমূল্য অপরিবর্তিত থাকাটা সেই আমলের লোকদের কাছে এক অপার বিষ্ময় ছিলো”(তারিখ-ই-ফিরুয
শাহী)। প্রকৃতপক্ষে এমন নজীর বিশ্বের ইতিহাসে আরেকটিও নেই! এই সফলতার রহস্য হচ্ছে-
প্রত্যেক বছরেই নিদৃষ্ঠ সময়গুলোতে গোটা রাজ্য থেকে সুলতানী কর্মচারীরা কৃষকদের কাছ
থেকে শস্য কিনে তা প্রতিটি এলাকায় স্থাপিত সুলতানী গুদামে জমা দিতেন। যে কোন
সমস্যা হলেই চাহিদা মুতাবিক ঐ খাদ্যশস্য যথা সময়ে জনগণের মাঝে সরবরাহ করা হতো।
প্রতিটি মহল্লা ২-৩টি করে সুলতানী গোলা ছিলো! এরপরও কোন কারণে যদি দাম ১পয়সাও বেড়ে
যেতো তবে সেই বাজার সরদারকে ২১ ঘা চাবুক খেতে হতো। খোদ গোটা সাম্রাজ্যের বাজার
প্রধান ইয়াকুব নাজীরকেও দরবারে ডেকে এনে চাবুক-পেটা করা হতো। সাধারণ প্রজাদের এতটা
অধিকার ছিলো যে- কেউ তার কাছ থেকে ১পয়সা দাম বেশি চেয়েছে- এতা পর্যন্ত খোদ দরবারে
এসে জানাতে পারতো। অবশ্য এমন ঘটনা ১ম দিকে ১বারই হয়েছিলো(তারিখ-ই-আলাঈ)। এরপর
সুলতানের কঠোর শাস্তির ভয়ে কেউই এমন কাজ আর করেনি! যদি কোন মহাজন নির্ধারিত
মূল্যের থেকে ১ পয়সা বেশি দরেও কোন দ্রব্য দোকানে বিক্রি করতো তবে তার সমস্ত
ধন-সম্পদ বাজেয়াফ্ত করা হতো! অনেক সময় এর সাথেও তাদের চাবুকের বাড়ি খেতে হতো!
একারণেই বারানী বলেন “বাজারীরা রাতদিন সুলতানের মৃত্যু কামনা
করতো ও প্রজারা দু’হাত তুলে সুলতানের জন্য দু’আ কোরতো”। শুধু
তাই-ই নয় রাজস্ব দফতর আগে থেকেই দুর্নীতির আখড়া ছিলো, এখনকার মতো
তখনও কোন সাধারণ মানুষ তাদের দারস্থ হলে তাদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়া হতো। সুলতান
আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী এই ঘুষও বন্ধ করে দেন,
এই নিয়ম করে – ঘুষখোরের
নিতম্বে সীল মেরে চিরদিনের জন্যে “রিসওয়াতখোর”(ঘুষখোর) লিখে দেয়া হতো। সরকারী তহ্বিল
তসরুফের অপরাধে ২,০০০ এরও অধিক কারকুন(শুল্ক কর্মকর্তা), বিতিখ্তি(হিসাবরক্ষক)
ও চৌধুরী(রাজস্ব সংগ্রাহক)র সমস্ত সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাদের ভিক্ষুকে পরিণত করা
হয়েছিলো! কর-লেখকদের সাথে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চাইতো না, কারণ তাদের
প্রায়ই লাথি-গুতো খেয়ে কারাগারে থাকতে হতো। ১টি পয়সাও যদি কোন জমীনদারের রাজস্ব
বাকি পরতো তবে তাও লাঠির আঘাতে আদায় করা হতো। দেখা যেতো তহসীলদার একাই ১০/২০ জন
চৌধুরীকে লাথি-গুতো দিয়ে বেঁধে নিয়ে এসেছেন! কারও সাহস ছিলো না- দুর্নীতি করার বা
এমন কিছু করার যাতে জনগণ কষ্ঠ পায় বা সরকারের ক্ষতি হয়। তখন মাত্র ৮টি
দাম(তাম্রমুদ্রা) হলে ১টি উট কিনতে পাওয়া যেতো! এমন আমলে ভারতে তথা সারা বিশ্বে
মাত্র ১বারই এসেছিলো, আর সেটা আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর আমলে।
বাংলার নওয়াব মুরশীদ কুলি খানও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন- আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী’রই দেখানো
পথে। তবে খরা ও অন্যান্য খারাপ সময় দাম বেড়ে যেতো। জনগণকে যে এতোটা শান্তিতে
রেখেছে- সে বাদে আর কে হতে পারে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক?
সামরিক শক্তি ও সামরিক সাফল্য
৯টি ধারায়
উপ-মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নির্ণয়ে বসে এ পর্যন্ত-
১/ভারতের প্রতি অবদান, ২/শাসক হিসাবে শাসন কৃতিত্ব ও ৩/জনগণের
অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আজ ৪/সামরিক শক্তি ও ৫/সামরিক সাফল্য
সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। (৪) সামরিক শক্তিঃ
অনেকের কাছেই সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবীদার ভারতের অপরাপর বিখ্যাত শাসকদের সামরিক
শক্তির সাথে আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জীর সামরিক শক্তি দেখানো হলোঃ ১/সম্রাট
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য(৩২৪-৩০০ ঈঃপূঃ)- সর্বমোট ৬ লাখ
সৈন্য। ২/সুলতান মুহাম্মাদ-ইবনে-তুগলাক শাহ্(১৩২৫-১৩৫১ ঈঃ)- ৯০,০০০ অশ্বারোহী, ৩ লাখ পদাতিক
ও ৩ হাজার রণহস্তী; মোটঃ ৩,৯০,৩০০। ৩/সুলতান
শের শাহ্(১৫৪০-১৫৫০ ঈঃ)- ৩ লাখ অশ্বা রোহী,
১ লাখ পদাতিক ও ৫০ হাজার গোলন্দাজ, মোটঃ ৪,৫০,০০০। ৩/বাদশাহ্
শাহ্ জাহান(১৬২৭-১৬৫৮ ঈঃ)- ২ লাখ অশ্বারোহী, ৪০ হাজার
পদাতিক ও ৫ হাজার রণহস্তী, মোটঃ ২,৪৫,০০০। ৪/বাদশাহ্
আওরঙ্গযেব(১৬৫৮-১৭০৭ ঈঃ)- ৩ লাখ অশ্বারোহী, ৬ লাখ
পদাতিক ও গোলন্দাজ, মোটঃ ৯,০০,০০০। ৫/বাদশাহ্
মুহাম্মাদ শাহ্(১৭১৯-১৭৪৮ ঈঃ)- ২ লাখ অশ্বারোহী, ৮ লাখ
পদাতিক ও গোলন্দাজ, মোটঃ ১০,০০,০০০! ৬/সুলতান
আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জী(১২৯৬-১৩১৬ ঈঃ)- ৪ লাখ ৭৫
হাজার অশ্বারোহী, ৯ লাখ পদাতিক ও ৭০,০০০
রণহস্তী; মোটঃ ১৩ লাখ ৭৫ হাজার! এবং ৭০,০০০
রণহস্তী সম্বলিত পঙ্গপালের মতো এই হস্তী বাহিনী ছিলো আজ পর্যন্ত জ্ঞাত বিশ্বের ২য়
বৃহত্তম হস্তী বাহিনী! ৪,৭৫,০০০ অশ্বারোহী ছাড়াও সুলতানী ঘোড়াশালে ৭০,০০০ ঘোড়া
ছিলো- যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বারতি ঘোড়া সরবরাহের জন্যে!(উৎসঃ
গুলশান-ই-ইব্রাহীমি ও তারিখ-ই-ফিরুয শাহী)। ১৩ লাখ+ এই পঙ্গপালের
মতো সৈন্য ছিলো আজ পর্যন্ত পাওয়া উপ-মহাদেশের
ইতিহাসের বৃহত্তম সামরিক বাহিনী। এরা শুধু সংখ্যাতেই
নয় বরং শক্তিতেও ছিলো বিপুল। বলাই বাহুল্য পঙ্গপালের মতো এই বিপুল পরিমণ #সৈন্য
আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী বাদে আর কারও ছিলো
না। (৫) সামরিক
সাফল্যঃ আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী’র সবথেকে বড় সামরিক সাফল্য মোঙ্গল আক্রমণ
বন্ধ করা ও সামান্য পরিমাণ সৈন্য নিয়েও বিরাট
বিরাট রাজ্যে হামলা চালিয়ে বড় বড় বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। আলা-উদ-দ্বীন
খাল্জীর পূর্বে মোঙ্গল আক্রমণ ছিলো হিন্দুস্তানের ১টি মারাত্বক
সমস্যা, এই সমস্যা এতো গুরুতর ছিলো খাওয়ারিযামের
শাহ্ জালাল-উদ-দ্বীন যখন সিন্ধু নদের যুদ্ধে
পরাজিত হয়ে হিন্দুস্তানের চলে আসেন ও হিন্দুস্তানের সুলতান ইল্তুতমিশের
সাহায্য চান তখন ইল্তুতমিশ চেঙ্গিজ খানের ভয়ে
জালাল-উদ-দ্বীনকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন “হিন্দুস্তানের
আবহাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের অনুকূল হবে না”। এটুকুতেই
ক্ষ্যান্ত হননি ইল্তুতমিশ, তিনি সসৈন্যে জালাল-উদ-দ্বীনের বিরুদ্ধেও অগ্রসর হন-
আশ্রয় দেওয়ার পরিবর্তে উনাকে বিতাড়িত করার জন্যে(তাবাকাত-ই-নাছিরী)। এটা ছিলো
১প্রকারের চামচামি যা চেঙ্গিজ খানকে খুশী করার জন্য করা হয়েছিলো। আর তা সফলও
হয়েছিলো, চেঙ্গিজ খান ইল্তুতমিশের
উত্তর ও কাজে খুশী হয়ে হিন্দের সীমায় আর প্রবেশ করেননি। কিন্তু আফসোস! যেই
সিন্দ্ থেকে ইল্তুতমিশ শাহ্ জালাল-উদ-দ্বীনকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিলেন-
সেই সিন্দ্ই হিন্দুস্তানের হাত থেকে বেড়িয়ে যায়। প্রাক খাল্জী আমলে #সিন্দ্
১টি বিতর্কিত ভূখন্ড(Dispute Zone)-এ পরিণত হয়,
যদিও বেশির ভাগ সময়েই মোঙ্গল শাসনাধীনে
ছিলো। মোঙ্গল আক্রমণের ভয়ে ইল্তুতমিশ থেকে শুরু
করে ফিরুয শাহ্ খাল্জী পর্যন্ত ৮৮ বছর(১২০৮-১২৯৬ ঈঃ) হিন্দুস্তানের প্রত্যেক
সুলতানকেই ভীত ও তটস্থ থাকতে হয়েছে। আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্’র সিংহাসন
আরোহণকালে সিন্দ্ #৩_ভাগে
বিভক্ত ছিলো, সিন্দের
ভাওয়ালপুর- হিন্দুস্তানের খাল্জীদের,
মূল সিন্দ্ পারস্যের ইলখানীদের ও পাঞ্চাব তুর্কীস্তানের
চাগতাই খানাতের অধীনে ছিলো। সুলতান ১২৯৬ সালে ইলখানী সুলতান গাজান মাহ্মূদকে
পরাজিত করে সিন্দ্ ও ১২৯৯ সালে চাগতাই খান দুয়া খানকে পরাজিত করে পাঞ্জাব
স্থায়ীভাবে পুর্নদখল করেন। সেই থেকে সিন্দ্ স্থায়ীভাবে হিন্দুস্তানের অধীনস্থ হয়, আর তা এভাবেই
হয় যে- সিন্দ্ নামক অঞ্চলটি চিরতরে হিন্দুস্তানের মাঝে হারিয়ে যায়, এভাবেই
হিন্দ্-সিন্দ্ বিলুপ্ত হয়ে হিন্দুস্তানের উন্থান ঘটে। প্রতিশোধ
নেওয়ার জন্য মোঙ্গলরা ১২৯৬-১৩০৮ ঈসায়ী পর্যন্ত ৮ বছরে ১৬ বার হিন্দুস্তান আক্রমণ
করে। কিন্তু আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী প্রত্যেকবারই তাদের পরাজিত করেন। বিশেষত
১৩০৬ সালে কাবাক খান ও ১৩০৮ সালে ইকবাল মান্দ্ উভয়েই ৫০,০০০
সৈন্যসহ সিন্দ্ আক্রমণ করলে তাদের কেবল পরাজিতই করা হয়নি বরং গোটা বাহিনীকেই
সুলতান ধ্বংস করে দেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রেই এদের কেবল গণহারে কচুকাটা করা হয় শুধু
তাই-ই নয় বাকীদের বন্দী করে হাতীর পায়ে পিষে হত্যা করা
হয়। ১৩০৬ ঈসায়ী থেকে সুলতান এই নীতি গ্রহণ করেন যে- “এখন থেকে
১জন মোঙ্গলও যেনো জীবিত অবস্থায় ফিরে যেতে না পারে”(গুলশান-ই-ইব্রাহীমি)। সুলতানী
বাহিনী ১৬ বারে মোট ৩ লাখ মোঙ্গল সেনা হত্যা করে! আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর ভয় তাদের
মনে এভাবে গেঁথে যায় যে- ১৩০৮ সালের পর থেকে তারা ভুলেও আর হিন্দুস্তানের
নাম মুখে নেয়নি! যুদ্ধক্ষেত্রে তো তাদের হত্যা করা হতোই সেই সাথে বন্দীদের
শিকলে বেঁধে টানা রাজপথ দিয়ে- জনতার মাঝ দিয়ে খোলা দরবারে সুলতানের সামনে নিয়ে
যাওয়া হতো এবং তাদের হাতীর পায়ের নিচে নিক্ষেপ করা হতো। হাতীর পায়ে পিষে এদের
হত্যা করা হতো, যদি কেউ ইসলাম গ্রহণ করতো তবে তাদের ক্ষমা
করা হতো। যদিও ইসলাম গ্রহণ করার পরও এরা
সুলতানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে- সুলতানের আদেশে ৩০,০০০ নও-মুসলিম
মোঙ্গলকে একই দিনে হত্যা করা হয়! সুলতানী বাহিনীর ভয়ে মোঙ্গলদের অবস্থা
এতোই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো যে- সুলতানের সেনাপতি “মালিক গাযী”(পরবর্তীতে সুলতান গিয়াস-উদ-দ্বীন তুগলাক)
প্রতি শীতকালে মোঙ্গল সীমান্তে বেড়াতে যেতেন ও
তাদের যুদ্ধের জন্য আহবান জানাতেন। কিন্তু ১জন মোঙ্গলেরও সাহস হতো না মালিক
গাযীর সেই চ্যালেঞ্জে সাড়া দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার। শেষ-মেষ মালিক গাযী মোঙ্গলদের
নারী ও হিজড়া আখ্যা দিয়ে ফিরে আসতেন(তারিখ-ই-আলাঈ)। সুলতানের সেরা বীর
জা’ফার খানকে মোঙ্গলরা এতোই ভয় পেতো যে-
মোঙ্গল মায়েরা তাদের শিশুদের জা’ফার খানের
ভয় দেখিয়ে ঘুম পারাতো! পশুরা ভয় পেলে মোঙ্গল রাখালরা তাদের বলতো “কি রে ভয়
পেয়েছিস কেন? জা’ফার খানকে দেখেছিস নাকি”(তারিখ-ই-ফিরুয
শাহী)?
সামরিক সাফল্য
সুলতান আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর সামরিক
সাফল্যের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- তিনি খুব অল্প-পরিমাণ সৈন্য নিয়েও বিরাট
অঞ্চল পদানত করে ফেলতেন! এত কম পরিমাণ সৈন্য নিয়ে এত বিরাট এলাকা অধিকারের নজীর
উপ-মহাদেশে আরেকটিও পাওয়া যায় না। বারানীর তারিখ-ই-ফিরুয শাহী’র ৩য়
খন্ডের ১ম অধ্যায়ে বর্ণিত আছে মালিক সাজ্জু’র বিদ্রোহ দমনের পুরষ্কার হিসাবে কারাহ্’র শাসনভার
প্রাপ্তির পর তিনি ৪,০০০ অশ্বারোহী ও ২,০০০ পদাতিক
সৈন্য নিয়ে মালব অধিকার করেন ও যাদব রাজ্য আক্রমণ করে গোন্দ্ওয়ানা ও বেরার অধিকার
করেন। বিশাল যাদব রাজ্যের রাজা এই মাত্র ৬,০০০ সৈন্যের মুখোমুখী হতেই সাহস পাননি! #এই_বিশাল
অঞ্চল আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী মাত্র ৬,০০০ সৈন্যের সাহায্যে অধিকার করেন!! এতে করে তারিখ-ই-ফিরুয শাহীতে বর্ণিত সুলতান বাল্বানের সেই ধারণা ও কথা সত্য প্রমাণিত হয়। অ-মুসলিম রাজ্যগুলো অধিকারের বিষয়ে সুলতান বাল্বান বলেছিলেন “আমি খুব ভালো করেই জানি এইসব হিন্দু রাজাদের আর সবকিছু বাদেও যদি ১ লাখ তীরান্দাজ সৈন্যও থাকে- তবু তাদের কেটে ফেলে তাদের সমস্থ হাতী, ঘোড়া, ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য দিল্লীর মাত্র ৬/৭ হাজার অশ্বারোহী সৈন্যই যথেষ্ঠ”(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী), এমনই ছিলো দিল্লীর প্রতাপ! আর আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর প্রতাপ তো এমনই ছিলো যে- গোটা মালব, গোন্দ্ওয়ানা ও বেরার অধিকার করেছিলেন মাত্র ২,০০০ পদাতিক ও ৪,০০০ সৈন্য নিয়ে! মালিক সাজ্জুর বিদ্রোহ তিনি এমন ক্ষীপ্রতার সাথে দমন করেছিলেন যে বীর ও বিজেতা হিসেবে তার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পরেছিলো। তিনিই ভারতীয় উপ-মহাদেশের ১মাত্র শাসক যিনি বিনা যুদ্ধেই মানচিত্রে প্রদর্শিত এই বিরাট ভূ-খন্ড অধিকার করেছিলেন, কি মালব, কি দেবগিরি’র যাদবরাজ কেউই আলা-উদ-দ্বীনের এই মাত্র ৬,০০০ সৈন্যের সম্মুখীন হতেই সাহস পায়নি! অথচ সঞ্জয় লীলা বনশালী আজগুবি সিনেমা তৈরী করে রতন সিংহ’র মতো ইদুঁরকে প্রকট করে দেখাচ্ছে! আর চুনোপুটি মেবাড়কে দেখাচ্ছে বিশাল শক্তি ও বীরত্বের অধিকারী হিসাবে!!! অথচ মেবাড় তো কোন ছার- তৎকালীন ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ অ-মুসলিম রাজ্য যাদব রাজ্যের রাজারও এই কলিজা ছিলো না যে- স্বয়ং আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর সামনে মাথা তুলে দাড়াতে পারে! অনেকে আধা-আধি পড়েই আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীকে কলঙ্কিত করতে চাইছেন এটা শুনে যে- তিনি নতুন ধর্ম উদ্ভাবন করতে চেয়েছিলেন এবং কিছু আলেম উনার প্রতি একারণে অসন্তুষ্ঠ যে- উনি আলেমদের কথা মতো সাম্রাজ্য চালাতেন না ও নিজের ইচ্ছেমতো কঠোর আইন জারী করতেন। নতুন ধর্মের ব্যাপারে আগেই বলেছি যে- তিনি মাতাল অবস্থায় এসব বলতেন। কিন্তু দিল্লীর কোত্ওয়াল আলা-উল-মূল্ক বোঝানোর পর তিনি তাওবাহ্ করেন ও মদ্যপান শুধু নিজেই আজীবণের জন্য ত্যাগ করেননি- বরং বিধর্মী প্রজাদেরও মদ ছাড়তে বাধ্য করেন! যারা অর্ধেক জেনেই তা প্রচার করে- কাউকে খারাপ করার উদ্দেশ্যে তাদের কোন অধিকারই নেই সেই সম্পর্কে কিছু বলার। কারণ তারা শুধু খারাপটাই বলে, ভালোটা বলে না, তারা এটাও জানে না যে- মাওলানা শামস্-উদ-দ্বীন তুর্ক(রহঃ) নামক সেই যামানার অন্যতম সেরা আলীম ৪,০০ হাদীসের কিতাবসহ মূলতানে এসেছিলেন ও সুলতাঙ্কে চিঠি লিখিছিলেন তিনি আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর আমলে অ-মুসলিমরা যেভাবে তার নামে কাঁপতো ও বাধ্য ছিলো তা উল্লেখ করে বলেন “ইসলামের এই সম্মান ও ধর্মকে এভাবে উচুতে তুলে ধরার জন্য আপনার প্রশংসা না করে পারা যায় না। হে সুলতান, আপনি যেভাবে মুহাম্মাদ মুস্তাফা(ছঃ)এর ধর্মকে সম্মান দান করেছেন, এই ১টি কাজের জন্য আপনার পর্বত পরিমাণ পাপও মাফ হতে পারে। যদি তা না হয়, তবে কিয়ামাহ্’র দিন আমার জানা আপনি টেনে ছিড়ে ফেলেন”(তারিখ-ই-ফিরুয শাহীর ৪র্থ খন্ডের ৪র্থ অধ্যায়)। খোদ নিজাম-উদ-দ্বীন আউলিয়া(রহঃ)-ও আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন।
অঞ্চল আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী মাত্র ৬,০০০ সৈন্যের সাহায্যে অধিকার করেন!! এতে করে তারিখ-ই-ফিরুয শাহীতে বর্ণিত সুলতান বাল্বানের সেই ধারণা ও কথা সত্য প্রমাণিত হয়। অ-মুসলিম রাজ্যগুলো অধিকারের বিষয়ে সুলতান বাল্বান বলেছিলেন “আমি খুব ভালো করেই জানি এইসব হিন্দু রাজাদের আর সবকিছু বাদেও যদি ১ লাখ তীরান্দাজ সৈন্যও থাকে- তবু তাদের কেটে ফেলে তাদের সমস্থ হাতী, ঘোড়া, ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য দিল্লীর মাত্র ৬/৭ হাজার অশ্বারোহী সৈন্যই যথেষ্ঠ”(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী), এমনই ছিলো দিল্লীর প্রতাপ! আর আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর প্রতাপ তো এমনই ছিলো যে- গোটা মালব, গোন্দ্ওয়ানা ও বেরার অধিকার করেছিলেন মাত্র ২,০০০ পদাতিক ও ৪,০০০ সৈন্য নিয়ে! মালিক সাজ্জুর বিদ্রোহ তিনি এমন ক্ষীপ্রতার সাথে দমন করেছিলেন যে বীর ও বিজেতা হিসেবে তার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পরেছিলো। তিনিই ভারতীয় উপ-মহাদেশের ১মাত্র শাসক যিনি বিনা যুদ্ধেই মানচিত্রে প্রদর্শিত এই বিরাট ভূ-খন্ড অধিকার করেছিলেন, কি মালব, কি দেবগিরি’র যাদবরাজ কেউই আলা-উদ-দ্বীনের এই মাত্র ৬,০০০ সৈন্যের সম্মুখীন হতেই সাহস পায়নি! অথচ সঞ্জয় লীলা বনশালী আজগুবি সিনেমা তৈরী করে রতন সিংহ’র মতো ইদুঁরকে প্রকট করে দেখাচ্ছে! আর চুনোপুটি মেবাড়কে দেখাচ্ছে বিশাল শক্তি ও বীরত্বের অধিকারী হিসাবে!!! অথচ মেবাড় তো কোন ছার- তৎকালীন ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ অ-মুসলিম রাজ্য যাদব রাজ্যের রাজারও এই কলিজা ছিলো না যে- স্বয়ং আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর সামনে মাথা তুলে দাড়াতে পারে! অনেকে আধা-আধি পড়েই আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীকে কলঙ্কিত করতে চাইছেন এটা শুনে যে- তিনি নতুন ধর্ম উদ্ভাবন করতে চেয়েছিলেন এবং কিছু আলেম উনার প্রতি একারণে অসন্তুষ্ঠ যে- উনি আলেমদের কথা মতো সাম্রাজ্য চালাতেন না ও নিজের ইচ্ছেমতো কঠোর আইন জারী করতেন। নতুন ধর্মের ব্যাপারে আগেই বলেছি যে- তিনি মাতাল অবস্থায় এসব বলতেন। কিন্তু দিল্লীর কোত্ওয়াল আলা-উল-মূল্ক বোঝানোর পর তিনি তাওবাহ্ করেন ও মদ্যপান শুধু নিজেই আজীবণের জন্য ত্যাগ করেননি- বরং বিধর্মী প্রজাদেরও মদ ছাড়তে বাধ্য করেন! যারা অর্ধেক জেনেই তা প্রচার করে- কাউকে খারাপ করার উদ্দেশ্যে তাদের কোন অধিকারই নেই সেই সম্পর্কে কিছু বলার। কারণ তারা শুধু খারাপটাই বলে, ভালোটা বলে না, তারা এটাও জানে না যে- মাওলানা শামস্-উদ-দ্বীন তুর্ক(রহঃ) নামক সেই যামানার অন্যতম সেরা আলীম ৪,০০ হাদীসের কিতাবসহ মূলতানে এসেছিলেন ও সুলতাঙ্কে চিঠি লিখিছিলেন তিনি আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর আমলে অ-মুসলিমরা যেভাবে তার নামে কাঁপতো ও বাধ্য ছিলো তা উল্লেখ করে বলেন “ইসলামের এই সম্মান ও ধর্মকে এভাবে উচুতে তুলে ধরার জন্য আপনার প্রশংসা না করে পারা যায় না। হে সুলতান, আপনি যেভাবে মুহাম্মাদ মুস্তাফা(ছঃ)এর ধর্মকে সম্মান দান করেছেন, এই ১টি কাজের জন্য আপনার পর্বত পরিমাণ পাপও মাফ হতে পারে। যদি তা না হয়, তবে কিয়ামাহ্’র দিন আমার জানা আপনি টেনে ছিড়ে ফেলেন”(তারিখ-ই-ফিরুয শাহীর ৪র্থ খন্ডের ৪র্থ অধ্যায়)। খোদ নিজাম-উদ-দ্বীন আউলিয়া(রহঃ)-ও আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন।
বিজেতা হিসাবে কৃতিত্ব
৯টি ধারায় উপ-মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নিরুপণে বসে ১/ভারতের প্রতি অবদান, ২/শাসক হিসাবে শাসন কৃতিত্ব, ৩/জনগণের অবস্থা, ৪/সামরিক শক্তি ও ৫/সামরিক সাফল্য সম্পর্কে আলোচনা করে ফেলেছি। আজ ৬/বিজেতা হিসাবে কৃতিত্ব নিরুপণে বসেছি। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে- আমি বিজেতা হিসাবে কৃতিত্ব নিরুপণের কথা বলছি- বৃহত্তম সাম্রাজ্যের অধিশ্বর নয়। আর একারণেই খাল্জী সালতানাতের চেয়েও বড় তুগলাক সালতানাতকে বাদ দেয়া হয়েছে, কারণ তুগলাকরা বিশাল খাল্জী সালতানাতকে প্রায় অটুটাবস্থায় পেয়ে এর সীমা আরও বাড়িয়েছিলো। এমন রাজ্যের নজীর ভারতে ভুরি ভুরি আছে- যে/যারা উত্তরাধিকার সূত্রেই বিরাট রাজ্য পেয়েছিলো, নিজেরা সামান্য রাজ্যবিস্তার করে যার ফলে- তাদের রাজ্য বৃহত্তম রাজ্যগুলোর কাতারে এসে পরে। যাহোক একারণেই আমি আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্’র পূর্বে ১টি ও উনার পরে ১টি সাম্রাজ্যকে বেছে নিয়েছি- বিজেতা হিসাবে উনার কৃতিত্ব নিরুপণের জন্যে। বেছে নেওয়া সাম্রাজ্য দু’টিই বিশ্ববিখ্যাত ও আকারে বিরাট এবং অ-মুসলিম ও মুসলিমদের কাছে গর্বের বস্তু। এর প্রথমটি হচ্ছে- সম্রাট অশোকের আমলের মৌর্য্য সাম্রাজ্য এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে- বাদশাহ্ আওরঙ্গযেব আলামগীরের আমলে তাইমূরী(মোগল) সাম্রাজ্য। চলুন এই ২ সাম্রাজ্যের ২ সম্রাটের সাথে বিজেতা হিসেবে আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর তুলনা করে দেখি? #১_নং_মানচিত্র
দেখুন- এটা মৌর্য্য সাম্রাজ্যের অবস্থা, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য(৩২৪-৩০০ ঈঃ পূঃ) চাণক্যের সহায়তায় বিনাযুদ্ধে সুবিশাল নন্দ সাম্রাজ্য(১নং মানচিত্রে প্রদর্শিত হালকা লাল ও লাল চিহ্নিত ভূভাগ) অধিকার করে মৌর্য্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি গ্রীক অধিকৃত পাঞ্জাব ও সিন্ধু অধিকার করেন, এছাড়াও তিনি সেলুসিড সাম্রাজ্যের সাথে সফলতার সাথে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার ফলে সেলুসিড রাজকুমারী হেলেনা বিয়ে করেন, এই বিয়ের যৌতুক হিসাবে কাবুলীস্তান, কান্দাহার, হিরাত ও মাকরান লাভ করলে- মৌর্য্য সাম্রাজ্য বিরাট আকার ধারণ করে। কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের সবথেকে বড় ব্যর্থতা সে গঙ্গাহৃদয়, প্রাচ্য ও কলিঙ্গ অধিকারে ব্যর্থ হন- এগুলোও নন্দ সাম্রাজ্যের প্রদেশ ছিলো, কিন্তু এই ৩ রাজ্য যুক্ত হয়ে বিশাল কলিঙ্গ সাম্রাজ্য গড়ে তুলে। পরবর্তী মৌর্য্য সম্রাট বিন্দুসার(৩০০-২৭৩ ঈঃ পঃ) মৌর্য্য অধিকারের বাহিরে থাকা রাজপুতানা ও গুজরাট অধিকারের মাধ্যমে মৌর্য্য সাম্রাজ্যকে আরও বিস্তৃত করেন। সবশেষে অশোক(২৭২-২৩২ ঈঃপূঃ) কলিঙ্গ সাম্রাজ্য অধিকার করলে মৌর্য্য সাম্রাজ্য বিস্তৃতির চরমে পৌছে। যদিও অশোকের মৃত্যুর সাথে সাথেই এই বিশাল সাম্রাজ্য ভেঙে পরতে থাকে! মৌর্য্য সাম্রাজ্যের সাথে #২_নং_মানচিত্রে
প্রদর্শিত আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর অধিকৃত ভূখন্ডের তুলনা করে দেখুন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য, বিন্দুসার, অশোক- যে কারও দ্বারা অধিকৃত ভূখন্ডের সাথে তুলনা করে দেখুন! প্রসঙ্গেক্রমে বলতে চাই- এই মানচিত্রগুলো আমার দীর্ঘ গবেষণার ফল- আল্লাহ্ দিলে এগুলো নির্ভুল। #৩_নং_মানচিত্র
দেখুন- এতে শাহ্ জাহানের আমলে(১৬২৭-১৬৫৮ ঈঃ) মোগল সাম্রাজ্যের সাথে আওরঙ্গযেব আলামগীর(১ম)এর দ্বারা অধিকৃত ভূভাগ দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য যে- সিংহাসনে আরোহণের পর বাদশাহ্ হিসাবে অধিকৃত ভূভাগই নয়- বরং সিংহাসনে আরোহণের পূর্বে শাহ্যাদা থাকাকালীন সময়েও আওরঙ্গযেব কর্তৃক অধিকৃত ভূখন্ড দেখানো হয়েছে। আওরঙ্গযেব(১৬৫৮-১৭০৭ ঈঃ)- বিজাপুরের আদিলশাহী, গোলকুন্দার কুতুব শাহী, কাচাড়, লাদাখ, আসামের দারং ও আরাকান হতে চট্টগ্রাম পুর্নদখল করে। নিঃসন্দেহে এটাই ছিলো উপ-মহাদেশের বৃহত্তম সাম্রাজ্য। কিন্তু এসময় মোগল সাম্রাজ্য ছিলো ১টি ছিদ্রায়িত রাষ্ট্র, দাক্ষিণাত্যে বিচ্ছিন্নভাবে একাধিক এলাকা জুড়ে মারাঠা রাজ্য কায়েম ছিলো, মেবাড়ের ভেতর চিতোর স্বাধীন ছিলো। এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য দেখানো সম্ভব নয়- তাই মানচিত্রে এগুলো দেখানো হয়নি। আর সবথেকে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে- আওরঙ্গযেবের ইন্তেকালের পর এই বিশাল সাম্রাজ্য টুকরা টুকরা হয়ে যায়- দাক্ষিণাত্যের বিচ্ছিন্ন মারাঠা রাজুগুলো বিরাট রাজ্যে পরিণত হয়, গোটা মেবাড় স্বাধীন হয়ে যায় ও দারং আসামের পেটে চলে যায়। এবারে #৪_নং_মানচিত্র
দেখুন, এবারে এই মানচিত্রকে ১ ও ৩ নং মানচিত্রের সাথে মিলিয়ে দেখে নিজেই বলুন- কে সবথেকে বেশি অঞ্চল অধিকার করেছে? আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর ইন্তেকালের পর এই বিশাল রাজ্য কিন্তু ভেঙে পরেনি, বরং দানব হয়ে ওঠে- দাক্ষিণাত্যে মুসলিম প্রতাপ ১৩৭০ ঈসায়ী পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়। এমনই ছিলো আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর কঠোর শাসনের প্রভাব!
৯টি ধারায় উপ-মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নিরুপণে বসে ১/ভারতের প্রতি অবদান, ২/শাসক হিসাবে শাসন কৃতিত্ব, ৩/জনগণের অবস্থা, ৪/সামরিক শক্তি ও ৫/সামরিক সাফল্য সম্পর্কে আলোচনা করে ফেলেছি। আজ ৬/বিজেতা হিসাবে কৃতিত্ব নিরুপণে বসেছি। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে- আমি বিজেতা হিসাবে কৃতিত্ব নিরুপণের কথা বলছি- বৃহত্তম সাম্রাজ্যের অধিশ্বর নয়। আর একারণেই খাল্জী সালতানাতের চেয়েও বড় তুগলাক সালতানাতকে বাদ দেয়া হয়েছে, কারণ তুগলাকরা বিশাল খাল্জী সালতানাতকে প্রায় অটুটাবস্থায় পেয়ে এর সীমা আরও বাড়িয়েছিলো। এমন রাজ্যের নজীর ভারতে ভুরি ভুরি আছে- যে/যারা উত্তরাধিকার সূত্রেই বিরাট রাজ্য পেয়েছিলো, নিজেরা সামান্য রাজ্যবিস্তার করে যার ফলে- তাদের রাজ্য বৃহত্তম রাজ্যগুলোর কাতারে এসে পরে। যাহোক একারণেই আমি আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্’র পূর্বে ১টি ও উনার পরে ১টি সাম্রাজ্যকে বেছে নিয়েছি- বিজেতা হিসাবে উনার কৃতিত্ব নিরুপণের জন্যে। বেছে নেওয়া সাম্রাজ্য দু’টিই বিশ্ববিখ্যাত ও আকারে বিরাট এবং অ-মুসলিম ও মুসলিমদের কাছে গর্বের বস্তু। এর প্রথমটি হচ্ছে- সম্রাট অশোকের আমলের মৌর্য্য সাম্রাজ্য এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে- বাদশাহ্ আওরঙ্গযেব আলামগীরের আমলে তাইমূরী(মোগল) সাম্রাজ্য। চলুন এই ২ সাম্রাজ্যের ২ সম্রাটের সাথে বিজেতা হিসেবে আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর তুলনা করে দেখি? #১_নং_মানচিত্র
দেখুন- এটা মৌর্য্য সাম্রাজ্যের অবস্থা, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য(৩২৪-৩০০ ঈঃ পূঃ) চাণক্যের সহায়তায় বিনাযুদ্ধে সুবিশাল নন্দ সাম্রাজ্য(১নং মানচিত্রে প্রদর্শিত হালকা লাল ও লাল চিহ্নিত ভূভাগ) অধিকার করে মৌর্য্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি গ্রীক অধিকৃত পাঞ্জাব ও সিন্ধু অধিকার করেন, এছাড়াও তিনি সেলুসিড সাম্রাজ্যের সাথে সফলতার সাথে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার ফলে সেলুসিড রাজকুমারী হেলেনা বিয়ে করেন, এই বিয়ের যৌতুক হিসাবে কাবুলীস্তান, কান্দাহার, হিরাত ও মাকরান লাভ করলে- মৌর্য্য সাম্রাজ্য বিরাট আকার ধারণ করে। কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের সবথেকে বড় ব্যর্থতা সে গঙ্গাহৃদয়, প্রাচ্য ও কলিঙ্গ অধিকারে ব্যর্থ হন- এগুলোও নন্দ সাম্রাজ্যের প্রদেশ ছিলো, কিন্তু এই ৩ রাজ্য যুক্ত হয়ে বিশাল কলিঙ্গ সাম্রাজ্য গড়ে তুলে। পরবর্তী মৌর্য্য সম্রাট বিন্দুসার(৩০০-২৭৩ ঈঃ পঃ) মৌর্য্য অধিকারের বাহিরে থাকা রাজপুতানা ও গুজরাট অধিকারের মাধ্যমে মৌর্য্য সাম্রাজ্যকে আরও বিস্তৃত করেন। সবশেষে অশোক(২৭২-২৩২ ঈঃপূঃ) কলিঙ্গ সাম্রাজ্য অধিকার করলে মৌর্য্য সাম্রাজ্য বিস্তৃতির চরমে পৌছে। যদিও অশোকের মৃত্যুর সাথে সাথেই এই বিশাল সাম্রাজ্য ভেঙে পরতে থাকে! মৌর্য্য সাম্রাজ্যের সাথে #২_নং_মানচিত্রে
প্রদর্শিত আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর অধিকৃত ভূখন্ডের তুলনা করে দেখুন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য, বিন্দুসার, অশোক- যে কারও দ্বারা অধিকৃত ভূখন্ডের সাথে তুলনা করে দেখুন! প্রসঙ্গেক্রমে বলতে চাই- এই মানচিত্রগুলো আমার দীর্ঘ গবেষণার ফল- আল্লাহ্ দিলে এগুলো নির্ভুল। #৩_নং_মানচিত্র
দেখুন- এতে শাহ্ জাহানের আমলে(১৬২৭-১৬৫৮ ঈঃ) মোগল সাম্রাজ্যের সাথে আওরঙ্গযেব আলামগীর(১ম)এর দ্বারা অধিকৃত ভূভাগ দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য যে- সিংহাসনে আরোহণের পর বাদশাহ্ হিসাবে অধিকৃত ভূভাগই নয়- বরং সিংহাসনে আরোহণের পূর্বে শাহ্যাদা থাকাকালীন সময়েও আওরঙ্গযেব কর্তৃক অধিকৃত ভূখন্ড দেখানো হয়েছে। আওরঙ্গযেব(১৬৫৮-১৭০৭ ঈঃ)- বিজাপুরের আদিলশাহী, গোলকুন্দার কুতুব শাহী, কাচাড়, লাদাখ, আসামের দারং ও আরাকান হতে চট্টগ্রাম পুর্নদখল করে। নিঃসন্দেহে এটাই ছিলো উপ-মহাদেশের বৃহত্তম সাম্রাজ্য। কিন্তু এসময় মোগল সাম্রাজ্য ছিলো ১টি ছিদ্রায়িত রাষ্ট্র, দাক্ষিণাত্যে বিচ্ছিন্নভাবে একাধিক এলাকা জুড়ে মারাঠা রাজ্য কায়েম ছিলো, মেবাড়ের ভেতর চিতোর স্বাধীন ছিলো। এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য দেখানো সম্ভব নয়- তাই মানচিত্রে এগুলো দেখানো হয়নি। আর সবথেকে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে- আওরঙ্গযেবের ইন্তেকালের পর এই বিশাল সাম্রাজ্য টুকরা টুকরা হয়ে যায়- দাক্ষিণাত্যের বিচ্ছিন্ন মারাঠা রাজুগুলো বিরাট রাজ্যে পরিণত হয়, গোটা মেবাড় স্বাধীন হয়ে যায় ও দারং আসামের পেটে চলে যায়। এবারে #৪_নং_মানচিত্র
দেখুন, এবারে এই মানচিত্রকে ১ ও ৩ নং মানচিত্রের সাথে মিলিয়ে দেখে নিজেই বলুন- কে সবথেকে বেশি অঞ্চল অধিকার করেছে? আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর ইন্তেকালের পর এই বিশাল রাজ্য কিন্তু ভেঙে পরেনি, বরং দানব হয়ে ওঠে- দাক্ষিণাত্যে মুসলিম প্রতাপ ১৩৭০ ঈসায়ী পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়। এমনই ছিলো আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর কঠোর শাসনের প্রভাব!
বিজেতা হিসাবে কৃতিত্ব
আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর পূর্বে খাল্জী
সালতানাত সীমিত অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিলো,
ভারতে তখন #২০টি_রাজ্য
ছিলো। এমন কি রাজধানী শাহ্র-ই-নাও(কেলুখেরী) এর অদূরে রণথম্ভোর তখন স্বাধীন ছিলো, এর দুর্ভেদ্য দূর্গ সুলতানের চাচা বহু চেষ্ঠা করেও অধিকারে ব্যর্থ হন। দিল্লী ও আজমীরের শেষ চৌহানরাজ ২য় পৃথ্বীরাজের বংশধর হামির দেব চৌহান ছিলেন এই দূর্গ ও দূর্গের নামে গড়ে ওঠা রণথম্ভোর রাজ্যের রাজা। এই ২০টি রাজ্যের ভেতর হিন্দুস্তান নিজেই ছিলো ১টা, হিন্দুস্তানবাদে বাকি ১৯টি রাজ্যের ভেতর সুলতান আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী ১০টি বিধর্মীরাজ্য অধিকার করেন। ইলখানাত ও চাগতাই খানাতের কাছ থেকে পাঞ্জাব ও সিন্দ্ পুনরুদ্ধার করেন, এবং ভারতের বাহিরের ৩টি রাজ্য- নাহান, সিরমুর ও জম্মু অধিকার করেন। অর্থাৎ ভারতের মোট ১২টি ও ভারতের বাহিরের ৩টিসহ সর্বমোট ১৫টি রাজ্য অধিকার করেন। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে- উনি ১টিও মুসলিম রাজ্য অধিকার করেননি, বা কোন মুসলিম রাজ্যের দিকে হাতও বাড়াননি। ইলখানাতের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের কারণ হিন্দুস্তানের খাছ-প্রদেশ সিন্দ্ পুর্নদখল করা। এছাড়া ইলখানাতের শাসক গাজান মাহ্মূদ ছিলেন শী’আ। ভারতের ২য় বৃহত্তম রাজ্য গৌড়ের বাল্বানী সালতানাতের দিকে হাত না বাড়ানোর কারণও ঐ একই। এমন নজীর ভারতে আরেকটিও পাওয়া যায় না যে- পর্যপ্ত শক্তি থাকা সত্ত্বেও সধর্মী বিধায় প্রতিবেশি রাজ্যকে সাম্রাজ্য বিস্তারের বাহিরে রাখা। গৌড়ের বাল্বানী সুলতান ফিরুয শাহ্ খুব শক্তিশালী সুলতান ছিলেন, কিন্তু আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর বিরুদ্ধে দাড়ানোর ক্ষমতা উনার ছিলো না। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন- অ-মুসলিম রাজ্য উড়িষ্যা কেন অধিকার করলেন না? এর উত্তর হচ্ছে প্রাকৃতিক বাঁধা- দুর্গম পাহাড়-পর্বতের কারণে উড়িষ্যা(পূর্ব গঙ্গরাজ্য) পশ্চিম বা দক্ষিণ থেকে আক্রমণ করা যেতো না। ১মাত্র গৌড় হয়েই উড়িষ্যায় আক্রমণ চালানো সম্ভব ছিলো। আর সেই গৌড়ই ছিলো মুসলিম রাজ্য বিধায়- আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর শক্তিশালী থাবা থেকে মুক্ত! দক্ষিণ দিক থেকে কষ্ঠসাধ্য হলেও উড়িষ্যায় আক্রমণ পরিচালনা করা যেতো- কিন্তু গৌড় বাদে ধরে রাখা সম্ভব ছিলো না। কারণ গৌড়ের অধিকারের উপর উড়িষ্যার দখল বজায় রাখা নির্ভর করতো। আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর সবথেকে বড় কৃতিত্ব দাক্ষিণাত্য বিজয়, দাক্ষিণাত্য ৪টি বিরাট বিরাট ও শক্তিশালী রাজ্যে বিভক্ত ছিলো। দাক্ষিণাত্য বিজয়ের ফলেই হিন্দুস্তানের জন্ম হয় ও #খাল্জী_সালতানাত
বিস্তৃতির শীর্ষ শিখরে আরোহণ করে। বর্তমানে পুরাতন দিল্লীর কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে #এই_মিনার
অবস্থিত, এর নাম আলাঈ মিনার। দাক্ষিণাত্য বিজয়ের স্মারক হিসাবে সুলতান এই মিনারের নির্মাণ আরম্ভ করেন- এটি এতোই বিশাল যে- সুলতানের ইচ্ছা ছিলো এটা কুতুব মিনারের ৩গুণ লম্বা হবে। কিন্তু অপদার্থ বংশধরেরা এই বিরাট নির্মাণকাজ শেষ করেনি। ২য় মানচিত্রে প্রদর্শিত এই রাজ্যের তুল্য রাজ্য উপ-মহাদেশে আর ১টিও ছিলো না। এর পূর্বে ও পরে আরও বিশাল বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হলেও সিরহিন্দ্ থেকে কন্যাকুমারীকা পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণে সমস্ত ভারত আর কেউই শাসন করতে পারেননি। আওরঙ্গযেব এর থেকেও বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করেছেন, কিন্তু তা ছিলো ছিদ্রায়িত। মেবাড়ের চিতোর ও উদয়পুর দূর্গ এবং দাক্ষিণাত্যে ছাড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক মারাঠা রাজ্য মোগল সাম্রাজ্যের আখন্ডতাই ক্ষুন্ন করেছিলো। সেই হিসাবে বলা যায়- বিজেতা হিসাবেও সুলতান আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জী সেরা ছিলেন- ভারতের সকল শাসকের মাঝে। কারণ উনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তীরা আরও বিরাট বিরাট সাম্রাজ্য শাসন করলেও জয় করেছিলেন উনার তুলনায় অনেক কম ভূখন্ড।
ছিলো। এমন কি রাজধানী শাহ্র-ই-নাও(কেলুখেরী) এর অদূরে রণথম্ভোর তখন স্বাধীন ছিলো, এর দুর্ভেদ্য দূর্গ সুলতানের চাচা বহু চেষ্ঠা করেও অধিকারে ব্যর্থ হন। দিল্লী ও আজমীরের শেষ চৌহানরাজ ২য় পৃথ্বীরাজের বংশধর হামির দেব চৌহান ছিলেন এই দূর্গ ও দূর্গের নামে গড়ে ওঠা রণথম্ভোর রাজ্যের রাজা। এই ২০টি রাজ্যের ভেতর হিন্দুস্তান নিজেই ছিলো ১টা, হিন্দুস্তানবাদে বাকি ১৯টি রাজ্যের ভেতর সুলতান আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী ১০টি বিধর্মীরাজ্য অধিকার করেন। ইলখানাত ও চাগতাই খানাতের কাছ থেকে পাঞ্জাব ও সিন্দ্ পুনরুদ্ধার করেন, এবং ভারতের বাহিরের ৩টি রাজ্য- নাহান, সিরমুর ও জম্মু অধিকার করেন। অর্থাৎ ভারতের মোট ১২টি ও ভারতের বাহিরের ৩টিসহ সর্বমোট ১৫টি রাজ্য অধিকার করেন। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে- উনি ১টিও মুসলিম রাজ্য অধিকার করেননি, বা কোন মুসলিম রাজ্যের দিকে হাতও বাড়াননি। ইলখানাতের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের কারণ হিন্দুস্তানের খাছ-প্রদেশ সিন্দ্ পুর্নদখল করা। এছাড়া ইলখানাতের শাসক গাজান মাহ্মূদ ছিলেন শী’আ। ভারতের ২য় বৃহত্তম রাজ্য গৌড়ের বাল্বানী সালতানাতের দিকে হাত না বাড়ানোর কারণও ঐ একই। এমন নজীর ভারতে আরেকটিও পাওয়া যায় না যে- পর্যপ্ত শক্তি থাকা সত্ত্বেও সধর্মী বিধায় প্রতিবেশি রাজ্যকে সাম্রাজ্য বিস্তারের বাহিরে রাখা। গৌড়ের বাল্বানী সুলতান ফিরুয শাহ্ খুব শক্তিশালী সুলতান ছিলেন, কিন্তু আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর বিরুদ্ধে দাড়ানোর ক্ষমতা উনার ছিলো না। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন- অ-মুসলিম রাজ্য উড়িষ্যা কেন অধিকার করলেন না? এর উত্তর হচ্ছে প্রাকৃতিক বাঁধা- দুর্গম পাহাড়-পর্বতের কারণে উড়িষ্যা(পূর্ব গঙ্গরাজ্য) পশ্চিম বা দক্ষিণ থেকে আক্রমণ করা যেতো না। ১মাত্র গৌড় হয়েই উড়িষ্যায় আক্রমণ চালানো সম্ভব ছিলো। আর সেই গৌড়ই ছিলো মুসলিম রাজ্য বিধায়- আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর শক্তিশালী থাবা থেকে মুক্ত! দক্ষিণ দিক থেকে কষ্ঠসাধ্য হলেও উড়িষ্যায় আক্রমণ পরিচালনা করা যেতো- কিন্তু গৌড় বাদে ধরে রাখা সম্ভব ছিলো না। কারণ গৌড়ের অধিকারের উপর উড়িষ্যার দখল বজায় রাখা নির্ভর করতো। আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর সবথেকে বড় কৃতিত্ব দাক্ষিণাত্য বিজয়, দাক্ষিণাত্য ৪টি বিরাট বিরাট ও শক্তিশালী রাজ্যে বিভক্ত ছিলো। দাক্ষিণাত্য বিজয়ের ফলেই হিন্দুস্তানের জন্ম হয় ও #খাল্জী_সালতানাত
বিস্তৃতির শীর্ষ শিখরে আরোহণ করে। বর্তমানে পুরাতন দিল্লীর কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে #এই_মিনার
অবস্থিত, এর নাম আলাঈ মিনার। দাক্ষিণাত্য বিজয়ের স্মারক হিসাবে সুলতান এই মিনারের নির্মাণ আরম্ভ করেন- এটি এতোই বিশাল যে- সুলতানের ইচ্ছা ছিলো এটা কুতুব মিনারের ৩গুণ লম্বা হবে। কিন্তু অপদার্থ বংশধরেরা এই বিরাট নির্মাণকাজ শেষ করেনি। ২য় মানচিত্রে প্রদর্শিত এই রাজ্যের তুল্য রাজ্য উপ-মহাদেশে আর ১টিও ছিলো না। এর পূর্বে ও পরে আরও বিশাল বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হলেও সিরহিন্দ্ থেকে কন্যাকুমারীকা পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণে সমস্ত ভারত আর কেউই শাসন করতে পারেননি। আওরঙ্গযেব এর থেকেও বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করেছেন, কিন্তু তা ছিলো ছিদ্রায়িত। মেবাড়ের চিতোর ও উদয়পুর দূর্গ এবং দাক্ষিণাত্যে ছাড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক মারাঠা রাজ্য মোগল সাম্রাজ্যের আখন্ডতাই ক্ষুন্ন করেছিলো। সেই হিসাবে বলা যায়- বিজেতা হিসাবেও সুলতান আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জী সেরা ছিলেন- ভারতের সকল শাসকের মাঝে। কারণ উনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তীরা আরও বিরাট বিরাট সাম্রাজ্য শাসন করলেও জয় করেছিলেন উনার তুলনায় অনেক কম ভূখন্ড।
প্রতিপত্তি
“মেবাড় ও রতন সিংহের পরিণতি” ৯টি ধারায় উপ-মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নিরুপণে বসে- ১/ভারতের প্রতি অবদান, ২/শাসক হিসাবে শাসন কৃতিত্ব, ৩/জনগণের অবস্থা, ৪/সামরিক শক্তি, ৫/সামরিক সাফল্ ও ৬/বিজেতা হিসাবে কৃতিত্ব নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়- শাসক হিসাবে প্রতিপত্তি। সুলতান আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী সাধারণত রাজধানীর বাহিরে দূরে কোন অভিযানে যেতেন না- প্রথমত, মোঙ্গল আক্রমণের কারণে, মোঙ্গলরা উনাকে যমের মতো ভয় করতো। তাই উনি না থাকলেই তারা হিন্দুস্তান আক্রমণের জন্য মুখিয়ে থাকতো –প্রথমদিকে। পরে অবশ্য মোঙ্গলরা সুলতানের দমন-নীতির ফলে এতোই ভীত হয়ে যায় যে- তারা হিন্দুস্তান আক্রমণের নামও আর মুখে নিতো না। দ্বিতীয়ত, গোটা উপ-মহাদেশে এমন কোন বাপের ব্যাটা ছিলো না- যাকে দমন করার জন্যে স্বয়ং আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর যাওয়া লাগবে। এ ব্যাপারে জিয়া-উদ-দ্বীন বারানী প্রত্যক্ষদর্শীদের বরআতে বলেন “দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পর ২য় যে জিনিসটি তখন সবার আশ্চর্য্যের বিষয় ছিলো সেটি হচ্ছে- সুলতান ‘হাজার সিতুন”(১,০০০ স্তম্ভ বিশিষ্ট প্রাসাদ)-এ বসে বসে হুকুম করতেন- গোটা সাম্রাজ্য সে মতেই চলতো ও তার দাসদের হাতে একের পর পর রাজ্য এভাবেই পতন ঘটছিলো যে মনে হচ্ছিলো- এই রাজ্য যেনো আগে থেকেই বিজিত হয়েই ছিলো। কোত্থাও কোন বাঁধার সম্মুখিন হতে হয়নি সুলতানী বাহিনীকে। প্রতি বছর বিজয় গুম্বুজ থেকে নিত্য নতুন রাজ্যের বিজইয়-বার্তা ঘোষণা করা হতো আর প্রতি বছর সুলতানের ২/১টি করে সন্তান জন্মগ্রহণ করতো। ঘোষকরা বিজয় বার্তা ঘোষণা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো, তেমনি দিল্লীর অধিবাসীরাও বিজইয়-বার্তা শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছিলো”। অধীনস্থ রাযাদের কাছে সুলতানের প্রভাব এমন-ই ছিলো যে- সুলতানের প্রতিনিধিরা প্রত্যেক অভিযানে সুলতানের উপস্থিতির নিদর্শন হিসাবে রাজকীয় লালছত্র বাহিনীর সম্মুখে বয়ে নিয়ে যেতো। আর অধীনস্থ রাজ্যগুলোতে উপস্থিত হওয়া মাত্রই ঐ রাজ্যের রাজারা নিজে এসে সেই লালছত্রকে অভিবাদন জানিয়ে কর পরিশোধ করতো। শুধু তাই-ই নয় এইসব রাজা নিজেরাই সুলতানকে খুশী রাখার জন্য সুলতানী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সবকিছু দিয়েই সাহায্য করতেন-স্বধর্মী রাজাদের বিরুদ্ধে। তবে রাজ্য বিস্তারের লক্ষে সুলতানকে মাত্র দু’বার স্বশরীরে অভিযানে যেতে হয়- প্রথমটি রণথম্ভোর ও দ্বিতীয়টি মেবাড়ের বিরুদ্ধে। কারণ ১২৯০ ও ৯১ সালে সুলতানের চাচা ও পূর্ববর্তী সুলতান জালাল-উদ-দ্বীন ফিরুয শাহ্ খাল্জী’র রণথম্ভোর অভিযান ২ দুই বার ব্যর্থ হয়। ১২৯৮ সালে সুলতান আলা-উদ-দ্বীন নূসরাত খানকে রণথম্ভোর অভিযানে প্রেরণ করলে- নূসরাত খান শাহীদ হন। এই সংবাদ শুনে সুলতান স্বয়ং ১২৯৯ সালে রণথম্ভোর অবরোধ করেন। এবং ২ বছর কঠোর অবরোধের পর ১৩০১ সালে দুর্ভেদ্য রণথম্ভোর দূর্গের পতনে চৌহান রাজ্য অধিকৃত হয়। রণথম্ভোরের রাজা হামীর দেবের পরিণতি কি হয়েছিলো সুলতানকে সশরীরে টেনে আনার জন্য? উত্তর- তার নিজের ও রাজধানীর সমস্ত অধিবাসীকে প্রাণ দিয়ে এর খেসারত দিতে হয়েছিলো। ৩০,০০০ ষড়যন্ত্রকারী বিশ্বাসঘাতক নও-মুসলিম মোঙ্গলসহ রণথম্ভোর দূর্গের মোট ৫০,০০০ অধিবাসীকে হত্যা করা হয়েছিলো! আর মেবাড়? ১২৯৯ সালে সুলতান উলুগ খানকে মেবাড় অধিকারের জন্য প্রেরণ করলে মেবাড়ের রাণা(রাজা) সমর সিংহ বিনাযুদ্ধেই সুলতানের আনুগত্য স্বীকার করে নিয়ে স্বেচ্ছায় কর ও জিযিয়াও প্রদান করেন(তারিখ-ই-আলাঈ ও ফুতুহ্-উস-সালাতীন)। রাজপুতদের নিয়ে যারা লাফায়- তারা যেনো যাচাই করে দেখে- আমি সত্য বল্লাম কি না। ১৩০১ সালে রণথম্ভোর অধিকারের পরের বছর ১৩০২ সালে মেবাড়ের রাণা সমর সিংহের মৃত্যুর পর পুত্র রতন সিংহ সিংহাসন আরোহণ করেন ও কর প্রদান বন্ধ রাখেন। সাথে সাথে মেবাড়ে সেনাবাহিনী পাঠানো হয়, কিন্তু তারা দুর্গম ও দুর্ভেদ্য চিতোরগড়ের পতন ঘটাতে ব্যর্থ হয়। এখবর শুনে সুলতান ক্রুদ্ধ হয় ও স্বয়ং ১৩০২ ঈসায়ীতেই চিতোরযাত্রা করেন। ৮ মাস অবরোধের পর ‘দুর্ভেদ্য’ চিতোরগড়ের পতন ঘটে(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী), রাণা রতন সিংহ সুলতানের কাছে গলায় শিকল পরে আত্নসমর্পণ করেন(তারিখ-ই-আলাঈ)। সুলতানকে চিতোর পর্যন্ত টেনে আনার ফল কি হয়েছিলো??? এর উত্তর পাওয়া যায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শি জৈন লেখক কোক্কা সুরীর “নভী নন্দনা জৈনধরা” গ্রন্থের ৪র্থ অধ্যায়ে “রতন সিংহকে বানরের মতো মেবাড়ের প্রতিটি শহরে প্রদর্শন করা হয়। তাকে ১টি খাঁচায় ভরে রাখা হয়েছিলো সুলতানের হুকুম ছিলো- সাবেক প্রজাদের দেখামাত্রই সে বানরের মতো অঙ্গ-ভঙ্গি ও শব্দ করবে। রতন সিংহ প্রাণের মায়ায় তাই করতে বাধ্য হন, সুলতান খুবই গুরুগম্ভীর ব্যক্তি হলেও রতন সিংহের বানরের অভিনয়ে তিনি তার স্বাভাবিক গাম্ভীর্য ভুলে হাসতেন ও অভিনয় বেশি ভালো হলে নিজের সাথে নিয়ে খেতেও বসতেন”। এই ছিলেন আমাদের #আলা_উদ_দ্বীন_খাল্জী
উপ-মহাদেশের সবচাইতে প্রতাপশালী শাসক। তিনি আদৌ #এই_উন্মাদের
মতো আচারণ করতেন না বা হাসতেনও না! আর “””””বীর”””””(?) #রতন_সিংহ???
তিনিই তো আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর পোষা বানর ছিলেন
“মেবাড় ও রতন সিংহের পরিণতি” ৯টি ধারায় উপ-মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নিরুপণে বসে- ১/ভারতের প্রতি অবদান, ২/শাসক হিসাবে শাসন কৃতিত্ব, ৩/জনগণের অবস্থা, ৪/সামরিক শক্তি, ৫/সামরিক সাফল্ ও ৬/বিজেতা হিসাবে কৃতিত্ব নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়- শাসক হিসাবে প্রতিপত্তি। সুলতান আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী সাধারণত রাজধানীর বাহিরে দূরে কোন অভিযানে যেতেন না- প্রথমত, মোঙ্গল আক্রমণের কারণে, মোঙ্গলরা উনাকে যমের মতো ভয় করতো। তাই উনি না থাকলেই তারা হিন্দুস্তান আক্রমণের জন্য মুখিয়ে থাকতো –প্রথমদিকে। পরে অবশ্য মোঙ্গলরা সুলতানের দমন-নীতির ফলে এতোই ভীত হয়ে যায় যে- তারা হিন্দুস্তান আক্রমণের নামও আর মুখে নিতো না। দ্বিতীয়ত, গোটা উপ-মহাদেশে এমন কোন বাপের ব্যাটা ছিলো না- যাকে দমন করার জন্যে স্বয়ং আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর যাওয়া লাগবে। এ ব্যাপারে জিয়া-উদ-দ্বীন বারানী প্রত্যক্ষদর্শীদের বরআতে বলেন “দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পর ২য় যে জিনিসটি তখন সবার আশ্চর্য্যের বিষয় ছিলো সেটি হচ্ছে- সুলতান ‘হাজার সিতুন”(১,০০০ স্তম্ভ বিশিষ্ট প্রাসাদ)-এ বসে বসে হুকুম করতেন- গোটা সাম্রাজ্য সে মতেই চলতো ও তার দাসদের হাতে একের পর পর রাজ্য এভাবেই পতন ঘটছিলো যে মনে হচ্ছিলো- এই রাজ্য যেনো আগে থেকেই বিজিত হয়েই ছিলো। কোত্থাও কোন বাঁধার সম্মুখিন হতে হয়নি সুলতানী বাহিনীকে। প্রতি বছর বিজয় গুম্বুজ থেকে নিত্য নতুন রাজ্যের বিজইয়-বার্তা ঘোষণা করা হতো আর প্রতি বছর সুলতানের ২/১টি করে সন্তান জন্মগ্রহণ করতো। ঘোষকরা বিজয় বার্তা ঘোষণা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো, তেমনি দিল্লীর অধিবাসীরাও বিজইয়-বার্তা শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছিলো”। অধীনস্থ রাযাদের কাছে সুলতানের প্রভাব এমন-ই ছিলো যে- সুলতানের প্রতিনিধিরা প্রত্যেক অভিযানে সুলতানের উপস্থিতির নিদর্শন হিসাবে রাজকীয় লালছত্র বাহিনীর সম্মুখে বয়ে নিয়ে যেতো। আর অধীনস্থ রাজ্যগুলোতে উপস্থিত হওয়া মাত্রই ঐ রাজ্যের রাজারা নিজে এসে সেই লালছত্রকে অভিবাদন জানিয়ে কর পরিশোধ করতো। শুধু তাই-ই নয় এইসব রাজা নিজেরাই সুলতানকে খুশী রাখার জন্য সুলতানী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সবকিছু দিয়েই সাহায্য করতেন-স্বধর্মী রাজাদের বিরুদ্ধে। তবে রাজ্য বিস্তারের লক্ষে সুলতানকে মাত্র দু’বার স্বশরীরে অভিযানে যেতে হয়- প্রথমটি রণথম্ভোর ও দ্বিতীয়টি মেবাড়ের বিরুদ্ধে। কারণ ১২৯০ ও ৯১ সালে সুলতানের চাচা ও পূর্ববর্তী সুলতান জালাল-উদ-দ্বীন ফিরুয শাহ্ খাল্জী’র রণথম্ভোর অভিযান ২ দুই বার ব্যর্থ হয়। ১২৯৮ সালে সুলতান আলা-উদ-দ্বীন নূসরাত খানকে রণথম্ভোর অভিযানে প্রেরণ করলে- নূসরাত খান শাহীদ হন। এই সংবাদ শুনে সুলতান স্বয়ং ১২৯৯ সালে রণথম্ভোর অবরোধ করেন। এবং ২ বছর কঠোর অবরোধের পর ১৩০১ সালে দুর্ভেদ্য রণথম্ভোর দূর্গের পতনে চৌহান রাজ্য অধিকৃত হয়। রণথম্ভোরের রাজা হামীর দেবের পরিণতি কি হয়েছিলো সুলতানকে সশরীরে টেনে আনার জন্য? উত্তর- তার নিজের ও রাজধানীর সমস্ত অধিবাসীকে প্রাণ দিয়ে এর খেসারত দিতে হয়েছিলো। ৩০,০০০ ষড়যন্ত্রকারী বিশ্বাসঘাতক নও-মুসলিম মোঙ্গলসহ রণথম্ভোর দূর্গের মোট ৫০,০০০ অধিবাসীকে হত্যা করা হয়েছিলো! আর মেবাড়? ১২৯৯ সালে সুলতান উলুগ খানকে মেবাড় অধিকারের জন্য প্রেরণ করলে মেবাড়ের রাণা(রাজা) সমর সিংহ বিনাযুদ্ধেই সুলতানের আনুগত্য স্বীকার করে নিয়ে স্বেচ্ছায় কর ও জিযিয়াও প্রদান করেন(তারিখ-ই-আলাঈ ও ফুতুহ্-উস-সালাতীন)। রাজপুতদের নিয়ে যারা লাফায়- তারা যেনো যাচাই করে দেখে- আমি সত্য বল্লাম কি না। ১৩০১ সালে রণথম্ভোর অধিকারের পরের বছর ১৩০২ সালে মেবাড়ের রাণা সমর সিংহের মৃত্যুর পর পুত্র রতন সিংহ সিংহাসন আরোহণ করেন ও কর প্রদান বন্ধ রাখেন। সাথে সাথে মেবাড়ে সেনাবাহিনী পাঠানো হয়, কিন্তু তারা দুর্গম ও দুর্ভেদ্য চিতোরগড়ের পতন ঘটাতে ব্যর্থ হয়। এখবর শুনে সুলতান ক্রুদ্ধ হয় ও স্বয়ং ১৩০২ ঈসায়ীতেই চিতোরযাত্রা করেন। ৮ মাস অবরোধের পর ‘দুর্ভেদ্য’ চিতোরগড়ের পতন ঘটে(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী), রাণা রতন সিংহ সুলতানের কাছে গলায় শিকল পরে আত্নসমর্পণ করেন(তারিখ-ই-আলাঈ)। সুলতানকে চিতোর পর্যন্ত টেনে আনার ফল কি হয়েছিলো??? এর উত্তর পাওয়া যায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শি জৈন লেখক কোক্কা সুরীর “নভী নন্দনা জৈনধরা” গ্রন্থের ৪র্থ অধ্যায়ে “রতন সিংহকে বানরের মতো মেবাড়ের প্রতিটি শহরে প্রদর্শন করা হয়। তাকে ১টি খাঁচায় ভরে রাখা হয়েছিলো সুলতানের হুকুম ছিলো- সাবেক প্রজাদের দেখামাত্রই সে বানরের মতো অঙ্গ-ভঙ্গি ও শব্দ করবে। রতন সিংহ প্রাণের মায়ায় তাই করতে বাধ্য হন, সুলতান খুবই গুরুগম্ভীর ব্যক্তি হলেও রতন সিংহের বানরের অভিনয়ে তিনি তার স্বাভাবিক গাম্ভীর্য ভুলে হাসতেন ও অভিনয় বেশি ভালো হলে নিজের সাথে নিয়ে খেতেও বসতেন”। এই ছিলেন আমাদের #আলা_উদ_দ্বীন_খাল্জী
উপ-মহাদেশের সবচাইতে প্রতাপশালী শাসক। তিনি আদৌ #এই_উন্মাদের
মতো আচারণ করতেন না বা হাসতেনও না! আর “””””বীর”””””(?) #রতন_সিংহ???
তিনিই তো আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর পোষা বানর ছিলেন
ঐশ্বর্য
৯টি ধারায় উপ-মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নিরুপণে বসে- ১/ভারতের প্রতি অবদান, ২/শাসক হিসাবে শাসন কৃতিত্ব, ৩/জনগণের অবস্থা, ৪/সামরিক শক্তি, ৫/সামরিক সাফল্, ৬/বিজেতা হিসাবে কৃতিত্ব ও ৭/প্রতপত্তি এই ৭টি ধারা বিশ্লেষণ করেছি। আজ ৮ম ধারা বিশ্লেষণে বসছি- এটা হচ্ছে ঐশ্বর্য। সর্বশ্রেষ্ঠ কেন সফল শাসক হওয়ার জন্যেও তার ঐশ্বর্য থাকাটা আবশ্যিক। আর্থিক ঐশ্বর্য্য, আমি এখানে গানীমাহ্-ও বোঝাচ্ছি। উপ-মহাদেশের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবচাইতে ঐশ্বর্যবান রাজবংশ ছিলো তাইমূরী বা মোগল রাজবংশ। তারা কেবল ভারতেই নয় বরং তৎকালীন বিশ্বের সেরা ধনী রাজবংশ ছিলেন। মোগল সাম্রাজ্যের বার্ষিক আয়- তৎকালীন বিশ্বে সর্বোচ্চ, আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর সাম্রাজ্যের বার্ষিক আয় কত ছিলো তা না জানা গেলেও এটা নিশ্চিত যে- তার আয় বেশি না হোক কম ছিলো না। তার প্রমাণ উনার আমলে দ্রব্য মূল্য ছিলো খুবই কম, মাত্র ৮টি তামার পয়সা হলে ১টি উট পাওয়া যেতো! আর খাল্জী আমলে কর ছিলো খুবই বেশি, বারানীর ভাষায় বলতে হয়- “সাম্রাজ্যের সবার কাছে যতো না অর্থ ছিলো, সব মিলিয়ে ধরলেও বাইতুল মালের সম্পদ ছিলো তার চাইতে বহুগুণ বেশি। কারণ বাইতুল মাল ছাড়া আর কোত্থাও কারও হাতে অর্থ ছিলো না বললেই চলে”। সবথেকে বড় কথা আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর গানীমাহ্ সরুপ যেই অর্থ লাভ করেন, তা মোগল বাদশাহ্রা দূরে থাক খোদ সুলতান মাহ্মূদও তার ১৭ বাড় ভারত অভিযানেও লাভ করেননি! বিভিন্ন রাজ্য থেকে সুলতান আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী গানীমাহ্সরুপ যে সম্পদ লাভ করেন তা নিন্মরুপঃ (১) উত্তর ভারতের- ১/রণথম্ভোর, ২/মারওয়াড়, ৩/মেবাড়, ৪/জালোর, ৫/গুজারাট, ৬/মালব, ৭/নাহান, ৮/সিরমুর, ৯/সিন্দ্ ও ১০/পাঞ্জাব থেকে লাভ করেন- ৭০,০০০+ ঘোড়া! ও অজানা অন্যান্য দ্রব্য!(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী ৪র্থ খন্ডের ২য় অধ্যায়) (২) যাদব রাজ্যে ১ম আক্রমণ চালিয়ে গোন্দ্ওয়ানা ও বেরার অধিকারের সময় ৬০০ মণ সোনা, ১,০০০ মণ রুপা, ৭ মণ মুক্তা, ২ মণ মূল্যবান পাথর, ৩০০ হাতী এবং কয়েক হাজার ঘোড়া!(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী’র ৩য় খন্ডের ৩য় অধ্যায় ও তারিখ-ই-আলাঈ) (৩) ২য় বার যাদব রাজ্য অভিযানের সময় লাভ করেন- ৫৭ টি হাতীর পিঠ বোঝাই হীরা ও অন্যান্য মণি-মানিক্য!(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী ও ফুতুহ্-উস-সালাতীন) (৪) কাকতীয় রাজ্য অধিকার করে লাভ করেন- ১,০০০ উট বোঝাই ধন-রত্ন, ১০০ হাতী এবং ৭,০০০ ঘোড়া! (তারিখ-ই-ফিরুয শাহী ও আমীর কোহী)। (৫) ৩৬টি হাতীর পিঠ বোঝাই ধন-রত্ন(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী)। এবং ৩টি বিখ্যাত হীরা পরবর্তীতে মোগলদের মুকুটমণি- ১ #কোহ্_ই_নূর,
পারস্যের মুকুটমণি ২#দারিইয়া_ই_নূর
ও কুতুব শাহী সুলতানদের মুকুটমণি #Star_of_the_south(পরবর্তীকালে প্রদত্ত নাম)
(৬) পান্ড্র রাজ্য অধিকার করে লাভ করেন- ৯৬,০০০(ছিয়ানব্বই হাজার) মণ সোনা!!, ৬১২টি হাতী ও ২০,০০০(বিশ হাজার) ঘোড়া!(তারিখ-ই-ফিরুয শাহীর ৪র্থ খন্ডের ৫ম অধ্যায়)। অর্থাৎ এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে সুলতান আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জী গানীমাহ্সরুপ লাভ করেন- ৯৬,৬০০ মণ সোনা, ১,০০০ মণ রুপা, ৯মণ হীরা-মুক্তা, ১,০০০ উট ও ৯৩টি হাতীর পিঠ বোঝাই ধন-রত্ন, ৮৭,০০০ এরও বেশি ঘোড়া এবং ১,০১২টি হাতী!!!! তারিখ-ই-ফিরুয শাহীর লেখক বলেন “আজ ৬০/৭০ বছর অতীত হয়ে গেছে, কিন্তু দিল্লীর রাজকোষে আজও সুলতান আলা-উদ-দ্বীনের জমা করে অনেক ধনরত্নই অটুট রয়ে গেছে। আজব ব্যাপার হচ্ছে কঠোর মেজাজের অধিকারী সুলতানের কাছে বিশ্বের সর্বাধিক মূল্যবান হীরা কোহ্-ই-নূর ও আর দু’টি বিখ্যাত হীরা দারিইয়া-ই-নূর ও Star of the southএর কোন মূল্যই ছিলো না। এই হীরা ৩টির তাইমূরী(মোগল) সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবুরের হাতে পরেই বিশ্বখ্যাত হয়ে ওঠে। কোহ্-ই-নূর মোগল মুকুটমণিতে পরিণত হয়। নাদির শাহ্ কোহ্-ই-নূরের সাথে দারিইয়া-ই-নূর নিয়ে গেলে এটি পারস্যের মুকুটমণিতে পরিণত হয়। এবং Star of the south বাহ্মানী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হাসানের হাতে পরে- দাওলাতাবাদ দূর্গ অধিকারের সময় এবং বাহ্মানীদের পতনের পর তেলেঙ্গানায় কুতুব শাহী সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হলে এটি কুতুব শাহীদের মুকুটমণিতে পরিণত হয়।
৯টি ধারায় উপ-মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নিরুপণে বসে- ১/ভারতের প্রতি অবদান, ২/শাসক হিসাবে শাসন কৃতিত্ব, ৩/জনগণের অবস্থা, ৪/সামরিক শক্তি, ৫/সামরিক সাফল্, ৬/বিজেতা হিসাবে কৃতিত্ব ও ৭/প্রতপত্তি এই ৭টি ধারা বিশ্লেষণ করেছি। আজ ৮ম ধারা বিশ্লেষণে বসছি- এটা হচ্ছে ঐশ্বর্য। সর্বশ্রেষ্ঠ কেন সফল শাসক হওয়ার জন্যেও তার ঐশ্বর্য থাকাটা আবশ্যিক। আর্থিক ঐশ্বর্য্য, আমি এখানে গানীমাহ্-ও বোঝাচ্ছি। উপ-মহাদেশের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবচাইতে ঐশ্বর্যবান রাজবংশ ছিলো তাইমূরী বা মোগল রাজবংশ। তারা কেবল ভারতেই নয় বরং তৎকালীন বিশ্বের সেরা ধনী রাজবংশ ছিলেন। মোগল সাম্রাজ্যের বার্ষিক আয়- তৎকালীন বিশ্বে সর্বোচ্চ, আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর সাম্রাজ্যের বার্ষিক আয় কত ছিলো তা না জানা গেলেও এটা নিশ্চিত যে- তার আয় বেশি না হোক কম ছিলো না। তার প্রমাণ উনার আমলে দ্রব্য মূল্য ছিলো খুবই কম, মাত্র ৮টি তামার পয়সা হলে ১টি উট পাওয়া যেতো! আর খাল্জী আমলে কর ছিলো খুবই বেশি, বারানীর ভাষায় বলতে হয়- “সাম্রাজ্যের সবার কাছে যতো না অর্থ ছিলো, সব মিলিয়ে ধরলেও বাইতুল মালের সম্পদ ছিলো তার চাইতে বহুগুণ বেশি। কারণ বাইতুল মাল ছাড়া আর কোত্থাও কারও হাতে অর্থ ছিলো না বললেই চলে”। সবথেকে বড় কথা আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর গানীমাহ্ সরুপ যেই অর্থ লাভ করেন, তা মোগল বাদশাহ্রা দূরে থাক খোদ সুলতান মাহ্মূদও তার ১৭ বাড় ভারত অভিযানেও লাভ করেননি! বিভিন্ন রাজ্য থেকে সুলতান আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী গানীমাহ্সরুপ যে সম্পদ লাভ করেন তা নিন্মরুপঃ (১) উত্তর ভারতের- ১/রণথম্ভোর, ২/মারওয়াড়, ৩/মেবাড়, ৪/জালোর, ৫/গুজারাট, ৬/মালব, ৭/নাহান, ৮/সিরমুর, ৯/সিন্দ্ ও ১০/পাঞ্জাব থেকে লাভ করেন- ৭০,০০০+ ঘোড়া! ও অজানা অন্যান্য দ্রব্য!(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী ৪র্থ খন্ডের ২য় অধ্যায়) (২) যাদব রাজ্যে ১ম আক্রমণ চালিয়ে গোন্দ্ওয়ানা ও বেরার অধিকারের সময় ৬০০ মণ সোনা, ১,০০০ মণ রুপা, ৭ মণ মুক্তা, ২ মণ মূল্যবান পাথর, ৩০০ হাতী এবং কয়েক হাজার ঘোড়া!(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী’র ৩য় খন্ডের ৩য় অধ্যায় ও তারিখ-ই-আলাঈ) (৩) ২য় বার যাদব রাজ্য অভিযানের সময় লাভ করেন- ৫৭ টি হাতীর পিঠ বোঝাই হীরা ও অন্যান্য মণি-মানিক্য!(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী ও ফুতুহ্-উস-সালাতীন) (৪) কাকতীয় রাজ্য অধিকার করে লাভ করেন- ১,০০০ উট বোঝাই ধন-রত্ন, ১০০ হাতী এবং ৭,০০০ ঘোড়া! (তারিখ-ই-ফিরুয শাহী ও আমীর কোহী)। (৫) ৩৬টি হাতীর পিঠ বোঝাই ধন-রত্ন(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী)। এবং ৩টি বিখ্যাত হীরা পরবর্তীতে মোগলদের মুকুটমণি- ১ #কোহ্_ই_নূর,
পারস্যের মুকুটমণি ২#দারিইয়া_ই_নূর
ও কুতুব শাহী সুলতানদের মুকুটমণি #Star_of_the_south(পরবর্তীকালে প্রদত্ত নাম)
(৬) পান্ড্র রাজ্য অধিকার করে লাভ করেন- ৯৬,০০০(ছিয়ানব্বই হাজার) মণ সোনা!!, ৬১২টি হাতী ও ২০,০০০(বিশ হাজার) ঘোড়া!(তারিখ-ই-ফিরুয শাহীর ৪র্থ খন্ডের ৫ম অধ্যায়)। অর্থাৎ এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে সুলতান আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জী গানীমাহ্সরুপ লাভ করেন- ৯৬,৬০০ মণ সোনা, ১,০০০ মণ রুপা, ৯মণ হীরা-মুক্তা, ১,০০০ উট ও ৯৩টি হাতীর পিঠ বোঝাই ধন-রত্ন, ৮৭,০০০ এরও বেশি ঘোড়া এবং ১,০১২টি হাতী!!!! তারিখ-ই-ফিরুয শাহীর লেখক বলেন “আজ ৬০/৭০ বছর অতীত হয়ে গেছে, কিন্তু দিল্লীর রাজকোষে আজও সুলতান আলা-উদ-দ্বীনের জমা করে অনেক ধনরত্নই অটুট রয়ে গেছে। আজব ব্যাপার হচ্ছে কঠোর মেজাজের অধিকারী সুলতানের কাছে বিশ্বের সর্বাধিক মূল্যবান হীরা কোহ্-ই-নূর ও আর দু’টি বিখ্যাত হীরা দারিইয়া-ই-নূর ও Star of the southএর কোন মূল্যই ছিলো না। এই হীরা ৩টির তাইমূরী(মোগল) সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবুরের হাতে পরেই বিশ্বখ্যাত হয়ে ওঠে। কোহ্-ই-নূর মোগল মুকুটমণিতে পরিণত হয়। নাদির শাহ্ কোহ্-ই-নূরের সাথে দারিইয়া-ই-নূর নিয়ে গেলে এটি পারস্যের মুকুটমণিতে পরিণত হয়। এবং Star of the south বাহ্মানী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হাসানের হাতে পরে- দাওলাতাবাদ দূর্গ অধিকারের সময় এবং বাহ্মানীদের পতনের পর তেলেঙ্গানায় কুতুব শাহী সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হলে এটি কুতুব শাহীদের মুকুটমণিতে পরিণত হয়।
স্থায়ীত্ব ও ফলাফল ৯টি ধারায়
উপ-মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক নিরুপনে বসে এ পর্যন্ত- ১/ভারতের
প্রতি অবদান, ২/শাসক হিসাবে শাসন কৃতিত্ব, ৩/জনগণের
অবস্থা, ৪/সামরিক শক্তি, ৫/সামরিক
সাফল্, ৬/বিজেতা হিসাবে কৃতিত্ব, ৭/প্রতপত্তি
ও ৮/ঐশ্বর্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আজ
শেষ ধারাটি সম্পর্কে আলোচনা কোরব, সেটি হচ্ছে বিজয়। আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ
শাহ্ এই যে এত রাজ্য জয় করলেন- তার ফলাফলে কি হয়েছিলো? সর্বশ্রেষ্ঠ
শাসকের অপর দুই দাবীদার সম্রাট অশোক ও বাদশাহ্ আওরঙ্গযেব আলামগীরের বিরাট
সাম্রাজ্যের সাথে উনার সাম্রাজ্যের পার্থক্য ও শ্রেষ্ঠত্ব কোথায়? এর উত্তরে
আমি প্রথমেই দাক্ষিণাত্যের কথা বোলবো,
নর্মদার দক্ষিণে ভারতের সুবিশাল এলাকা
এমনই এক স্থান যেখানে আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর পূর্বে কোন মুসলিম বিজেতার অশ্বপদ
পড়েনি। বা কোন মুসলিম সৈনিকের পা-ও দাক্ষিণাত্যের বিরাট এলাকায় পড়েনি। এই এলাকা, মানচিত্রে
প্রদর্শিত #এই_বিশাল_এলাকায়
ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী। ভারতে আজ পর্যন্ত যতো মুসলিম শাসক- যতো এলাকায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন- তাদের কেউই আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্’র তুলনায় অর্ধেক ভূখন্ডেও ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এদিন দিয়ে ভারতের কোন মুসলিম শাসক-ই আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জীকে স্পর্শ করতে পারবে না। আজ দিল্লীর কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে যে অসমাপ্ত অথচ বিরাট #আলাঈ_মিনারের_ধ্বংসাবশেষ
দেখি তা আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী কর্তৃক দাক্ষিণাত্য ইসলামের বিজয়ের স্মারক জয়স্তম্ভ। এবারে আসুন স্থায়িত্বের দিকটা দেখি- আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জীর এই বিরাট অঞ্চলের ফলাফল কি হয়েছিলো? এর ফল হয়েছিলো ৩টি- প্রথমত- আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর বিরাট সাম্রাজ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে- উপ-মহাদেশের বৃহত্তম সালতানাত হিন্দুস্তানের #তুগলাক_সালতানাত
আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর ইন্তেকালের পর ১মাত্র মেবাড় বাদে বাকি গোটা সাম্রাজ্যই অটুট থাকে, এর স্থায়ীত্ব ছিলো ১৩১১-১৩৪৭ ঈসায়ী পর্যন্ত টানা ৩৬ বছর। সুদূর দক্ষিণ ও করমন্ডল উপকূলে ইসলাম কায়েম থাকে ১৩৭০ ঈসায়ী পর্যন্ত আরও ২৩ বছর। আর সুদূর দক্ষিণ বাদে দাক্ষিণাত্যে মুসলিম শাসন কায়েম থাকে ১৬৮৬ ঈসায়ী পর্যন্ত ‘একই ধারার’ আরও ৩১৬ বছর। কি হিন্দু কি মুসলিম? ভারতের আর কোন শাসকের রাজ্য বিজয়ের ফলাফল এত দীর্ঘস্থায়ী হয়নি- যতোটা আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী’র দ্বারা হয়েছিলো। সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পরপরই সুবিশাল মৌর্য সাম্রাজ্য টুকরো টুকরো হয়ে যেতে থাকে। আওরঙ্গযেব আলামগীরের ইন্তেকালের পর প্রকান্ড মোগল সাম্রাজ্যের দাক্ষিণাত্যে বিষ ফোঁড়ার মতো মারাঠা রাজ্য বিস্তৃত হতে থাকে ও মাঝে ছিটমহলের মতো মেবাড়ের উন্থান ঘটে! আর উত্তরসূরী? মৌর্য্য সাম্রাজ্যের পতনের পর বহু রাজ্যের উদ্ভব হয়- তবে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় শুঙ্গ রাজ্য। শুঙ্গদের সম্পর্কে যারা জানেন তারা নাক সিটকাচ্ছেন- কোথায় মৌর্য্য আর কোথায় শুঙ্গ। অপরদিকে মোগল সাম্রাজ্যের পতনের পর স্থাপিত হয়েছিলো মারাঠা রাজ্য। জানি সবাই নাক সিটকাচ্ছেন, কারণ সেটাই স্বাভাবিক। কোথায় প্রকান্ড মোগল সাম্রাজ্য আর কোথায় ইদুঁরে মারাঠা রাজ্য! কিন্তু খাল্জী সালতানাতের উত্তরসূরীদের কথা চিন্তা করে দেখুন- খাল্জীদের উত্তরসূরী তুগলাকেরা আরও বিরাট রাজ্য গড়ে তুলে। আর এসবই সম্ভব হয়েছিলো ১মাত্র আলা-উদ-দ্বীন খা্ল্জীর কারণে। তিনি এমন ভাবে রাজ্যগুলো জয় করেছিলেন ও বিজিত রাজা নয়- জাতীদের মনে এমন ভীতির জন্ম দিয়েছিলেন যে- তার রেশ বহু বছরেও কাটেনি। আশাকরি প্রমাণ করতে পেরেছি আমি কেন আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জীকে অন্ধকার আকাশে পূর্ণিমার চাঁদের সাথে তুলনা করেছিলাম, আর অন্যান্যদের তারকা বলেছিলাম?
ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী। ভারতে আজ পর্যন্ত যতো মুসলিম শাসক- যতো এলাকায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন- তাদের কেউই আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্’র তুলনায় অর্ধেক ভূখন্ডেও ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এদিন দিয়ে ভারতের কোন মুসলিম শাসক-ই আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জীকে স্পর্শ করতে পারবে না। আজ দিল্লীর কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে যে অসমাপ্ত অথচ বিরাট #আলাঈ_মিনারের_ধ্বংসাবশেষ
দেখি তা আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী কর্তৃক দাক্ষিণাত্য ইসলামের বিজয়ের স্মারক জয়স্তম্ভ। এবারে আসুন স্থায়িত্বের দিকটা দেখি- আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জীর এই বিরাট অঞ্চলের ফলাফল কি হয়েছিলো? এর ফল হয়েছিলো ৩টি- প্রথমত- আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর বিরাট সাম্রাজ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে- উপ-মহাদেশের বৃহত্তম সালতানাত হিন্দুস্তানের #তুগলাক_সালতানাত
আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর ইন্তেকালের পর ১মাত্র মেবাড় বাদে বাকি গোটা সাম্রাজ্যই অটুট থাকে, এর স্থায়ীত্ব ছিলো ১৩১১-১৩৪৭ ঈসায়ী পর্যন্ত টানা ৩৬ বছর। সুদূর দক্ষিণ ও করমন্ডল উপকূলে ইসলাম কায়েম থাকে ১৩৭০ ঈসায়ী পর্যন্ত আরও ২৩ বছর। আর সুদূর দক্ষিণ বাদে দাক্ষিণাত্যে মুসলিম শাসন কায়েম থাকে ১৬৮৬ ঈসায়ী পর্যন্ত ‘একই ধারার’ আরও ৩১৬ বছর। কি হিন্দু কি মুসলিম? ভারতের আর কোন শাসকের রাজ্য বিজয়ের ফলাফল এত দীর্ঘস্থায়ী হয়নি- যতোটা আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী’র দ্বারা হয়েছিলো। সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পরপরই সুবিশাল মৌর্য সাম্রাজ্য টুকরো টুকরো হয়ে যেতে থাকে। আওরঙ্গযেব আলামগীরের ইন্তেকালের পর প্রকান্ড মোগল সাম্রাজ্যের দাক্ষিণাত্যে বিষ ফোঁড়ার মতো মারাঠা রাজ্য বিস্তৃত হতে থাকে ও মাঝে ছিটমহলের মতো মেবাড়ের উন্থান ঘটে! আর উত্তরসূরী? মৌর্য্য সাম্রাজ্যের পতনের পর বহু রাজ্যের উদ্ভব হয়- তবে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় শুঙ্গ রাজ্য। শুঙ্গদের সম্পর্কে যারা জানেন তারা নাক সিটকাচ্ছেন- কোথায় মৌর্য্য আর কোথায় শুঙ্গ। অপরদিকে মোগল সাম্রাজ্যের পতনের পর স্থাপিত হয়েছিলো মারাঠা রাজ্য। জানি সবাই নাক সিটকাচ্ছেন, কারণ সেটাই স্বাভাবিক। কোথায় প্রকান্ড মোগল সাম্রাজ্য আর কোথায় ইদুঁরে মারাঠা রাজ্য! কিন্তু খাল্জী সালতানাতের উত্তরসূরীদের কথা চিন্তা করে দেখুন- খাল্জীদের উত্তরসূরী তুগলাকেরা আরও বিরাট রাজ্য গড়ে তুলে। আর এসবই সম্ভব হয়েছিলো ১মাত্র আলা-উদ-দ্বীন খা্ল্জীর কারণে। তিনি এমন ভাবে রাজ্যগুলো জয় করেছিলেন ও বিজিত রাজা নয়- জাতীদের মনে এমন ভীতির জন্ম দিয়েছিলেন যে- তার রেশ বহু বছরেও কাটেনি। আশাকরি প্রমাণ করতে পেরেছি আমি কেন আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জীকে অন্ধকার আকাশে পূর্ণিমার চাঁদের সাথে তুলনা করেছিলাম, আর অন্যান্যদের তারকা বলেছিলাম?
অপবাদসমূহ সুলতান
আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ সরাসরি খন্ডন না
করে- আমি ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসকরুপে তার কৃতিত্ব বর্ণনা করেছি। এতেকরে
শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণের সাথে সাথে অপবাদগুলোও উঠে এসেছে ও তা মিথ্যাও প্রতিপন্ন
হয়েছে। যেহেতু ইতিমধ্যেই উনার উপর আরোপিত অপবাদগুলো সম্পর্কে বলেছি তাই আজ এর সারমর্ম
দিলামঃ (১) সমকামীতার অভিযোগঃ শেষ জীবণে
আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী কুলাঙ্গার কুকুর মালিক কাফুরকে বিশ্বাস করে- নিজের ছেলেদের
ভুল বুঝে কঠিন শাস্তি দেন। মূলত এই কারণেই কিছু ঐতিহাসিক উনার উপর সমকামীতার
অভিযোগ করেন। যা ভিত্তিহিন। কারণ সম-সাময়িক কোত্থাও এর সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়
না। তবে- সমকামীতার বিরুদ্ধে উনার কঠোর অবস্থান জানা যায়। সবথেকে বড় প্রমাণ হচ্ছে
শাইখুল হিন্দ্ নিজাম-উদ-দ্বীন আউলিয়া(রহঃ) এর মুলফুজাত(আত্নজীবণি) থেকে এটা
স্পষ্ট যে শাইখ সুলতানকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন। ১জন সমকামীকে শাইখ নিশ্চই শ্রদ্ধা
করবেন না? মুলফুজাতের বিভিন্ন স্থানে সুলতানের কথা
সসম্মানে উল্লেখ করা হয়েছে ও উনার জন্য দু’আও করা হয়েছে। (২) নতুন
ধর্ম প্রবর্তনের অভিযোগঃ হ্যাঁ এটা সত্যি, উনি মাতাল
অবস্থায় এইসব বলতেন। কিন্তু সিরির কোত্ওয়াল আলা-উল-মূল্ক এই ব্যাপারে সুলতানকে
বোঝালে- উনি ভুল বুঝতে পারেন ও চিরতরে মদ্যপান ত্যাগ করে- গোটা রাজ্যেই মদ্যপান
নিষিদ্ধ করে দেন(তারিখ-ই-ফিরুয শাহী’র ৪র্থ খন্ডের ২য় অধ্যায়)। (৩) চাচা
হত্যার অভিযোগঃ হ্যাঁ এই অভিযোগও সত্য, তার কারণ
উনার চাচা একই সাথে উনার শশুড়ও ছিলেন। কিন্তু উনার কন্যা ও স্ত্রী(শাশুড়ি)
আলা-উদ-দ্বীনের সাথে ভালো ব্যবহার করতো না। এ ব্যাপারে সুলতান জালাল-উদ-দ্বীন
ফিরুয শাহ্ খাল্জী কিছুই বলতেন না। এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন উলুগ খান, মাহ্মূদ
সালীম ও ইখ্তিইয়ার-উদ-দ্বীন হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলো। আর সবাড় জ্ঞাতার্থে বলছি-
সুলতানের চাচা সুলতান ফিরুয শাহ্’র অনেক ভালো অভ্যাস ছিলো সন্দেহ নেই। উনি
খুব দয়ালুও ছিলেন, কিন্তু উনি ছিলেন সমকামী! তার সঙ্গীর নাম
ছিলো ‘ইয়ালদুয’
সার সাকী(তারিখ-ই-ফিরুয শাহীর ৩য় খন্ডের
১ম অধ্যায়)। (৪)রাণী পদ্মিনী উপাখ্যানঃ এটা ১টা
হাস্যকর অভিযোগ! কারণ সুলতান আলা-উদ-দ্বীন খাল্জীর চিতোর অধিকারের(১৩০৩ ঈঃ) ২৩৭
বছর পর শেরশাহ্’র রাজত্বকালে ১৫৪০ সালে “মালিক
মুহাম্মাদ জায়সী” নামক জনৈক বদমাশ লেখক “পদুমাবৎ” নামক ১টি
রুপকথা লেখেন কবিতা আকারে। যেখানে এই কাল্পনিক কাহিনীটি পাওয়া যায়, তবে
লক্ষনীয় ব্যাপার হচ্ছে- যারা এই উপাখ্যানে বিশ্বাস করেন- তারা কিন্তু রাণীর নাম
নিয়েও দ্বিধায় চোগেন। যেমন- জায়সী মতে তার নাম “পদুমা”,
বাংলায় অনুবাদক আলাওলের মতে রাণীর নাম
পদ্মাবতী। আর রাজপুতদের মতে রাণীর নাম পদ্মিনী! এটা যে মিথ্যা- এসব তারই প্রমাণ।
আর সমসাময়িক আমীর খুসরু, আমীর কোহী ও কিঞ্চিৎ পরবর্তীকালের বারানী
ও ইসামীর এদের কেউই কিন্তু মেবাড়ের রাজার নামটাও উল্লেখ করেননি! রাজার নাম রতন
সিংহ, নাকি রতন সেন ছিলো তাই নিয়েও বিতর্ক আছে!
এটা আসলেই নিশ্চিত নয়- রাজার নাম কি ছিলো! আমি কেবলমাত্র সবাড় বোঝার সুবিধার্থে
নাম রতন সিংহ লিখেছি। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে উপাখ্যানে ও প্রচলিত গল্পে চিতোরে জওহর
ব্রতের কথা থাকলেও সমসাময়িক চিতোর যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শি আমীর খুসরু বা জৈন গুরু
কোকা সুরী এদের কেউই কিন্তু এমন কিছুই লিখেননি! সিনেমাতে মেবাড়ের রাজার যে বীরত্ব
ও যুদ্ধ দেখানো হয়েছে তাও অবান্তর। কারণ দুই প্রত্যক্ষদর্শির মতেই “রাজা নিজেই
চিতোরের পতন আসন্ন বুঝতে পেরে সুলতানের ভয়ে আত্নসমর্পণ করেন”। হ্যাঁ
জওহরব্রত হয়েছিলো বটে- তবে সেটা রণথম্ভোরে- চিতোরে নয়, মুসলিম
ঐতিহাসিকেরাই তা লিখে গেছেন। জায়সীর মতে আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী ৮ বছরেও চিতোর
অধিকার করতে না পেরে ছলনার মাধ্যেম চিতোর জয় করেন। ৮টা ঠিকই আছে রে ভাই- ৮ মাস
অবরোধের পর চিতোরের পতন ঘটে- রাজা নিজেই আত্নসমর্পণ করেন। মালিক মুহাম্মাদ জায়সী
১জন কবি ছিলেন, তাই কবিদের বৈশিষ্ট অনুযায়ী ৮মাসকে ৮ বছর
করেছেন এটাই স্বাভাবিক। মালিক মুহাম্মাদ জায়সীর কাব্যমতে সুলতান চিতোরের ৩০,০০০
অধিবাসী হত্যা করেছিলেন। ৩০,০০০ হত্যা করেছিলেন- ঠিকই, কিন্তু তা
চিতোরে নয় রণথম্ভোরে। ঘটনার ২৩৭ বছর পর ১জন কবির কাছ থেকে বিকৃতি ছাড়া আর কি আশা
করা যায়? জায়গী রণথম্ভোর ও মেবাড় গুলিয়ে ফেলেছেন-
এই যা! সুলতান ১ হিন্দু রাজকুমারীকে ইসলামে দীক্ষিত করে বিয়ে করেছিলেন বটে। তবে তা
মেবাড়ে নয়- দাক্ষিণাত্যের দেবগিরির যাদব রাজ্যে। মালিক কাফুর যাদবরাজ রামচন্দ্র
দেবের কন্যা ঝাট্যপালীকে সিরি নিয়ে আসেন। সুলতান তাকে ইসলামে দীক্ষিত করে বিয়ে
করেন। জায়গী ১জন কবি তাই রামচন্দ্রকে রতন সিংহের সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন- এটাও
স্বাভাবিক। আর মেবাড়ের রাজার পরিণতি? প্রত্যক্ষদর্শি
কাকাসুরীর মতে- সে স্বেচ্ছায় ৮ মাস পর চিতোরের পতন আসন্ন হয়ে গেলে নিজের গলায় শিকল
পরে সুলতানের সামনে এসে আত্ন-সমর্পণ করেন। সুলতান তাকে বানরের মতো খাচায় পুরে
চিতোরের শহরে শহরে প্রদর্শন করান। আশাকরি সব বিভ্রান্তির অবসান হবে? দিল্লীর
কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে দাক্ষিণাত্য বিজয়ের স্মারক অসমাপ্ত আলাঈ মিনারের ভেতর এই
ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক #শায়িত
আছেন।
আছেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন